প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০
একটু সহানুভূতি এবং প্রশংসা
প্রখ্যাত গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় জগদ্বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকা নিজের সুর করা ‘মানুষ মানুষের জন্য’ গানটিতে কী অমূল্য কথাই না বলেছেন-মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্য/ একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? -ও বন্ধু!/ মানুষ মানুষকে পণ্য করে/ মানুষ মানুষকে জীবিকা করে/ পুরানো ইতিহাস ফিরে এলে লজ্জা কি তুমি পাবে না? -ও বন্ধু!/ বলো কি তোমার ক্ষতি/ জীবনের অথৈ নদী/ পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি।/ মানুষ যদি সে না হয় মানুষ/ দানব কখনো হয় না মানুষ/ যদি দানব কখনো হয় বা মানুষ/ লজ্জা কি তুমি পাবে না? -ও বন্ধু!
|আরো খবর
ভূপেন হাজারিকার এ গান শুধু বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে নয়, বিশে^র সকল ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সমকালীন প্রেক্ষাপটে তিনি এ গান গাইলেও তার আবেদন চিরকালীনই হয়ে গেছে। তাঁর এ গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে কতো মানবিক কাজ যে সম্পন্ন হয়েছে, সেটির হিসাব মিলানো ভার। একজন দুর্বল বা অক্ষম ব্যক্তির জন্যে সবল বা সক্ষম ব্যক্তির একটু সহানুভূতি যে অনেক বড় কিছুই করতে পারে এবং সেটি আশাব্যঞ্জক প্রশংসনীয় হতে পারে, তার সর্বশেষ প্রমাণ পাওয়া গেলো গত ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার চাঁদপুর লঞ্চঘাটে।
‘চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তার মানবিকতা’ শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ের মধ্যে যাত্রীবোঝাই একটি লঞ্চ ঢাকা থেকে চাঁদপুর পৌঁছায়। এ সময় লঞ্চঘাটে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম। তিনি তখন জানতে পারেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভার বলাখাল গ্রামের এক অসুস্থ মা পন্টুনে শুয়ে আছেন, যাকে ঘিরে মানুষের জটলা, যিনি টাকার অভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। সঙ্গে থাকা সন্তানের সাথে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, চিকিৎসার্থে ঢাকা গিয়েছিলেন এই মা। ঢাকা থেকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে আসার পর টাকার অভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। এমতাবস্থায় চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা একটি সিএনজি অটোরিকশা ডাকলেন, ড্রাইভারকে ভাড়া দিলেন এবং কিছু ফল কিনে সন্তানটির হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, আমার নাম্বারটা রেখে দাও। যদি কখনো তোমার মায়ের চিকিৎসার দরকার হয় বা কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়, তাহলে আমার নাম্বারে ফোন দিবে।
একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন মানবিকতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। একজন অসুস্থ মায়ের প্রতি তাঁর একটু সহানুভূতি প্রদর্শনের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি প্রশংসার জোয়ারে ভাসতে থাকেন। কথা হলো, তিনি কি হাজার হাজার টাকা খরচ করে কৃত্রিমভাবে প্রশংসা কিনেছেন?-মোটেও নয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে একজন মায়ের প্রতি যে মানবিকতা দেখিয়েছেন, সেটা সকল বিত্তবানের থাকে না, কেবল চিত্তবানদেরই থাকে। তিনি তেমনই একজন। তাঁকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনেক ধন্যবাদ।