প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০
মাওলানা ফজলুল হক সত্যিই দৃষ্টান্তযোগ্য
হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডস্থ বলাখাল গ্রামের বাজার সংলগ্ন বিশাল দিঘির উত্তর পাড়ে একটি প্রাচীন ঈদগাহ অবস্থিত। বলাখালের বিখ্যাত হিন্দু জমিদারগণ এই ঈদগাহের জন্যে পর্যাপ্ত জায়গা দান করে ওয়াক্ফ করে দেন। এর কিয়দংশে মাটি ভরাট করে একটি বটগাছের নিচে ঈদগাহের কার্যক্রম চললেও বহু জায়গাই ছিলো অব্যবহৃত। যার ফলে এই ঈদগাহের পূর্বাংশে পূর্ব অবস্থান থেকে স্থানান্তরিত হয় বলাখাল নূরে মদিনা সিনিয়র মাদ্রাসা। এর ফলে ঈদগাহটির গুরুত্ব বেড়ে যায় এবং বিকল্প যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।
|আরো খবর
বলাখালের এই ঈদগাহটি পঞ্চগ্রাম ঈদগাহ হিসেবে পরিচিত। কেননা এতে চারপাশের পাঁচটি গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। এ বিখ্যাত ও প্রাচীন ঈদগাহে একটানা ৫৬ বছর ইমামতি করেন আলহাজ্ব মাওলানা ফজলুল হক। এটা নিঃসন্দেহে কোনো ইমামের জন্যে বিরল রেকর্ড। কেননা কোনো ইমাম স্বীয় গ্রহণযোগ্যতা নির্বিবাদে প্রমাণ করতে না পারলে এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থতার মতো নিয়ামত নিয়ে দীর্ঘজীবী হতে না পারলে এমন রেকর্ড অর্জন সম্ভব নয়।
মাওলানা ফজলুল হক বর্তমানে অশীতিপর কিংবা নবতিপর বৃদ্ধ। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি উক্ত ঈদগাহের ইমামতি থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নেন গত ১০ জুলাই ২০২২ রোববার পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজে ইমামতির মধ্য দিয়ে। তিনি এমন বিদায় না নিলে তাঁর গড়া ইমামতির রেকর্ডটি অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যেতো। তিনি পেশাগত জীবনে হাজীগঞ্জ উপজেলার নওহাটা ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন এবং শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নেন বহু আগে।
বিদায়কালে পাঁচ গ্রামের ভক্ত মুসল্লিগণ মাওলানা ফজলুল হকের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা তাঁকে ক্রেস্ট প্রদান করেন। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আর মুসল্লিরা আবেগ সংবরণ করতে না পেরে অশ্রু বিসর্জন দেন। এমতাবস্থায় হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হয়। কারো বিদায়কালে ক্রেস্ট বা উপহারের চেয়ে স্বতোৎসারিত আবেগে বিসর্জিত অশ্রু যে কতোটা অমূল্য সেটা অনুধাবন করতে পারে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীরাই। সত্যি কথা বলতে কি, বলাখাল ঈদগাহের ৫৬ বছরের ইমাম মাওলানা ফজলুল হক এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, যেটি বহুমাত্রিক বিবেচনায় দৃষ্টান্তযোগ্য, স্মরণীয় এবং এ ঈদগাহের সুখ্যাতি ও সমৃদ্ধির জন্যে ইতিবাচক। আমরা এই ইমামের দীর্ঘায়ু এবং সার্বঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করছি।