প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০
বিদ্যোৎসাহী মকবুল আহমেদের মৃত্যুতে শোক
আমাদের সমাজে কিছু ব্যক্তি শিক্ষার বিস্তারে নির্মোহভাবে কাজ করেছেন এবং করছেন। এরা রাজনীতিক হলেও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির ঊর্ধ্বে থেকে শুধু নিজ এলাকা নয়, তার বাইরে গিয়েও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ায় কাজ করেছেন ও করছেন। এজন্যে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষকে একাত্ম করে কাজে লাগিয়েছেন ও লাগাচ্ছেন। এঁদের সংখ্যা খুব কম। এঁদেরই একজন হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের আহমেদাবাদ গ্রামের আলহাজ্ব মকবুল আহমেদ আখন্দ।
|আরো খবর
জনাব মকবুল আহমেদ আখন্দ ১৯৮৬ সালে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডে বলাখাল বাজার সংলগ্ন চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে প্রায় দু একর জমির ওপর বলাখাল মকবুল আহমেদ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিএনপি ঘরানার সক্রিয় রাজনীতিক হয়েও এ কলেজটি প্রতিষ্ঠায় সকল দলের মানুষের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করেন। তিনি ১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের বলিষ্ঠ সংগঠক, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত এমপি, বলাখাল গ্রামের বাসিন্দা ডাঃ এম. এ. সাত্তার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরীসহ তাঁদের ভক্ত-অনুরাগীদের কাজে লাগিয়ে বলাখালে তাঁর নামে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলাখালসহ সন্নিহিত অঞ্চলে সুধী-সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সমাদৃত মকবুল আহমেদ মুন্সিকে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়ে কলেজটিকে উপজেলার পুরানো অন্যান্য কলেজের চেয়েও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এর ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় একের পর এক আশাব্যঞ্জক ফলাফল অর্জন করে কলেজটি শুধু উপজেলাবাসীর নয়, জেলাবাসীরও দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন কলেজটি ছিলো উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের। মাত্র ১১ বছরের মধ্যে ১৯৯৭ সালে কলেজটি ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়।
বলাখাল থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে আহমেদাবাদ (সাবেক রামরা) গ্রামের আখন্দ বাড়িতে ১৯৪২ সালে মকবুল আহমেদের জন্ম। ব্যবসায়িক কারণে রাজধানী ঢাকার আরামবাগে তিনি স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন এবং প্রচুর সমাজসেবামূলক কাজ করেন। যার ফলস্বরূপ তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৩২নং ওয়ার্ডে তিনবার নির্বাচিত কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপালনের সুযোগ পান। তিনি রাজধানীতে ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটালেও নিজ জন্মস্থানের প্রতি ছিলেন ভীষণ দুর্বল। তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ির সামনে একটি এতিমখানা ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় শুধু নিজেকে ব্যাপৃত করেন নি, তাঁর রাজারগাঁও ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন মকবুল আহমেদ ইসমাইলিয়া দাখিল মাদ্রাসা। এছাড়া মেনাপুর পীর বাদশা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্রাবাস এবং কয়েক বছর এ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
আলহাজ্ব মকবুল আহমেদ আখন্দ তাঁর রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক পরিচয়ের বাইরে বিদ্যোৎসাহী পরিচয়টিকে সবার কাছে বেশি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি রোববার (৩ জুলাই ২০২২) বিকেলে রাজধানীর আরামবাগের বাসায় ৮০ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। আরামবাগ বালুর মাঠ, বলাখাল কলেজ মাঠ ও নিজ বাড়ির সম্মুখস্থ মাদ্রাসা মাঠে তিন দফা জানাজা শেষে পরদিন সোমবার তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আমরা এ বিদ্যোৎসাহীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি, তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।