প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০
একজন এরশাদ কাজীর চমৎকার মানসিকতা
চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন তরপুরচন্ডী কাজী বাড়ির মৃত মোঃ রফিকুল ইসলাম কাজীর দ্বিতীয় ছেলে মোঃ এরশাদ কাজী। চাঁদপুর সরকারি কলেজে বিএসএস-এ পড়াবস্থায় জমি বিক্রির টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যাংক থেকে নেননি কোনো ঋণ। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠের কৃষিকণ্ঠ বিভাগের বিভাগীয় সম্পাদক মোঃ আবদুর রহমান গাজীকে অতি সম্প্রতি তাঁর সফল ব্যবসায়ী হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, চাকরি না করার নেশা থেকেই মূলত আমার খামার করা। আমার ইচ্ছা ছিলো চাকরি করবো না, তবে মানুষকে চাকরি দেবো। আর সে ইচ্ছে থেকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি ব্যবসাকে। করেছি একের পর এক খামার। আল্লাহর রহমতে দেখেছিও আলোর মুখ। বর্তমানে আমার খামারে ১০জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বেতন সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা, সর্বনিম্ন ৯ হাজার টাকা। আমি এখন একদিনের মুরগির বাচ্চা এবং বিভিন্ন জায়গায় মুরগির খাবার সরবরাহ করি। আমার পোল্ট্রি খামারে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি রয়েছে। এছাড়া আমার গরুর খামার রয়েছে। সে সুবাদে ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্যে ১০টি ষাঁড় বিক্রি করা হবে। আমার মুরগি ও গরুর খামারের পাশে মাছের খামারও রয়েছে। আমার পোল্ট্রি খামারে ৩৫-৪০ হজার মুরগি পালনের এবং গরুর খামারে ৫০-৮০টি গরু পালনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
|আরো খবর
মুরগির খামার করতে গিয়ে এরশাদ কাজীর শুরুটা ছিলো অভিজ্ঞতাহীনতার কারণে লসে ভরপুর। তিনি বলেন, ২০১০ সালে আমি ৫শ’ মুরগি দিয়ে শুরু করি। প্রতিটি মুরগির বাচ্চা ৬৯ টাকা করে কিনে প্রতি কেজি ৯৫ টাকা করে বিক্রি করায় অনেক লস হয়েছে। তারপরও মুরগির খামার বড় করে ৫শ’ থেকে মুরগির সংখ্যা করি ৩৫ হাজার। এতে ২০১৪-১৫ সালে লসের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় তিন লাখ টাকা। ২০১৭ সালে এসে আমি লেয়ার পোল্ট্রি খামারের পাশাপাশি শুরু করি সোনালি মুরগি পালন। আর তাতেই আসে আমার সোনালি দিন। সাথে আছে অভিজ্ঞতাও। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগিতে ভাগ্য বদল করতে সমর্থ হই। তিনি জানান, আমি মুরগির বাচ্চা পালন করতে গিয়ে লস খাই। ২০১৮ সালের শেষের দিকে লস কাটিয়ে ২৬শ’ বাচ্চায় লাভ করি ৮০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে এসে শেড আরো বড় করি। তখন আমার খামারে বাচ্চার সংখ্যা ৪ হাজার। ২০২০ সালে এসে ৪ হাজার ৮শ’ বাচ্চার এক চালানে আমার লাভ হয় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। করোনার প্রকোপ কমার পর ৪ হাজার বাচ্চার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজারে। এতে লাভ হয় তিন লাখ টাকার মতো। ২০২১ সালেও লাভ হয়। ৪ হাজার বাচ্চায় লাভ হয় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর এভাবেই চলছে। আল্লাহর রহমতে এখন খামারের ভালো অবস্থা।
এরশাদ কাজী বলেন, ব্যবসায় কখনও হতাশ হওয়া ঠিক নয়। লেগে থেকে কাজ করতে হবে। আমি প্রথমে অনভিজ্ঞ ছিলাম। পরবর্তীতে অভিজ্ঞতা অর্জন আর বাজার পলিসি জানার কারণে লসের ভার বহন করতে হচ্ছে না। এখন আমি বাচ্চা কখন কীভাবে কিনতে হয় তা বুঝি। এমনকি বাচ্চার প্রাথমিক চিকিৎসাও আমি নিজে দিয়ে থাকি। মারাত্মক কোনো সমস্যা না হলে আমি চিকিৎসকের শরনাপন্ন হই না।
প্রিয় পাঠক, এরশাদ কাজীর সফল ব্যবসায়ী হওয়ার গল্প জানার পর তার চমৎকার মানসিকতাও জানা গেলো। লসের ওপর লাভের ভিত্তি গড়ার ধৈর্য ও সাহসিকতা তার মতো খুব কম ব্যবসায়ীরই আছে। লস খেলেই অধিকাংশ ব্যবসায়ী হতোদ্যম হয়ে যায়। এটা যে ঠিক নয় সেটা অদম্য প্রয়াসে এরশাদ কাজী প্রমাণ করেছেন। প্রতারণা করে ক্রেতাকে ঠকিয়ে অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হতে চায়। এ চাওয়ায় সর্বদ্রষ্টা ¯্রষ্টার কৃপা থাকে না। আমরা সফল ব্যবসায়ী হওয়ার ক্ষেত্রে এরশাদ কাজীকে অনুসরণ করতে নতুন ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।