প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০
খাবার হোটেলের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে
হাজীগঞ্জে পাঁচটি খাবার হোটেলকে নগদ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম এই জরিমানা আদায় করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে হোটেলের রান্নাঘরে তেলাপোকা, ড্রেনে মুরগির চামড়া, নাড়ি- ভুড়ি, ফ্রিজে কাঁচা মাংস আর রান্না করা মাংস, বাটা মসলা, দই, ফ্রাই, ছানা, তরকারিসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা দেখতে পান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি জরিমানা আরোপের পাশাপাশি হোটেল কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোঃ সামছুল ইসলাম রমিজ ও হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আব্দুল আজিজ উপস্থিত ছিলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমকে বলেন, খাবার হোটেলগুলোর অব্যবস্থাপনা আদালতকে বিস্মিত করেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
|আরো খবর
আমাদের দেশে বাহ্যিক চাকচিক্য নিয়ে খাবারের হোটেলগুলো চলে। ক্রেতারা তাতেই বেশি আকৃষ্ট হয়। এ হোটেলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে সচেতন ক্রেতা ছাড়া খুব কম ক্রেতাই কথা বলে। কোনো কোনো হোটেলে অনেক দিন পূর্বে সস্তায় কেনা ও ডীপ ফ্রিজে সংরক্ষিত মাছ-মাংস থেকে নিয়ে সেগুলো বেশি মসলা ও তেলে রান্না করে ক্রেতাদের সামনে পরিবেশন করা হয়। অভিজ্ঞ ক্রেতা সেটা ধরতে পারে কিংবা বুঝতে পারে বলে কথা বলে। আর অনভিজ্ঞ ক্রেতা সেটা ধরতে পারে না বলে খেয়েদেয়ে চলে যায়। অভিজ্ঞ ক্রেতারা কোনো হোটেলে গিয়ে বয়-বেয়ারাদের বলে, তোমাদের মাছ-মাংসের মধ্যে যেটা তাজা অর্থাৎ গতকাল বা আজকে কেনা হয়েছে সেটা রান্না হয়ে থাকলে দাও। অন্যথায় সবজি, ভর্তা বা অন্য কিছু দাও। হোটেলে গিয়ে যারা পাতলা ডাল খায়, সে ডাল কবে রান্না হয়েছে সেটা বয়-বেয়ারারা জানে না। কারণ, বাবুর্চি পুরানো ডালের পাত্রে নূতন ডাল রান্না করে ঢালে। অধিকাংশ হোটেলে ডালের পাত্র প্রতিদিন ধোয়া হয় না। প্রতিদিন বেচা-বিক্রির পর রান্না করা মাছ-মাংস-সবজি ইত্যাদি ফ্রিজে রাখা হলেও পাতলা ডাল কিন্তু রাখা হয় না। এ ডাল গরম দিয়ে নির্ধারিত পাত্রেই রেখে দেয়া হয় এবং পরদিন গরম দিয়ে বিক্রি করা হয়।
দেশের প্রখ্যাত পরিবেশবিদ ও পানি বিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত প্রায় এক যুগেরও অধিক সময় পূর্বে চাঁদপুরে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট (সিএফএসডি) কর্তৃক আয়োজিত এক কর্মশালায় এসে প্রসঙ্গক্রমে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, বাহ্যিক চাকচিক্যে নয়, খাবারের গুণগত মান সম্পর্কে জেনেই তবে কোনো হোটেলের ক্রেতা হওয়া উত্তম। আপনি যদি গ্রামীণ রাস্তার পাশে কিংবা সাধারণ মানের অন্য কোনো হোটেলে তাজা মাছ-মাংসসহ অন্যান্য খাবার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রান্না করার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত হন, বিশেষ করে খাবারটির সদ্য গরম করার বিষয়টি জানতে পারেন, তাহলে বসার ভালো জ ায়গা ও পরিবেশ না থাকলেও হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে/বসে খাবার খাওয়া সম্পন্ন করতে পারেন।
চাঁদপুর জেলায় এক সময় সর্ববৃহৎ প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও বর্তমানে সেটি অনেক হ্রাস পেয়েছে। পুরাণবাজারের চেয়েও এখন বেশি পরিচিত হাজীগঞ্জ বাজার। এক সময় শুক্রবার ও সোমবার দুটি হাটবারে হাজীগঞ্জ বাজারে উপচেপড়া ক্রেতা সমাগম দেখা গেলেও বর্তমানে সপ্তাহের সাতদিনই একই রূপ দেখা যায়। সেজন্যে হাজীগঞ্জ বাজারে সুসজ্জিত, চাকচিক্যময় কিংবা উজ্জ্বল আলোকসজ্জিত অনেক খাবার হোটেল গড়ে উঠেছে। এসব হোটেলে স্থানীয় ক্রেতার চেয়ে অস্থানীয় ক্রেতাই বেশি। সেজন্যে কোনো কোনো হোটেল কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের প্রতারিত করার সুযোগ নেয় এবং নানা অব্যবস্থাপনায় হোটেলগুলো চালায়, যেটি বৃহস্পতিবারের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। এমনটি সত্যিই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। আমরা হাজীগঞ্জের হোটেলগুলোতে সুন্দর ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও খাবারের মান রক্ষার বিষয়ে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রত্যাশা করছি। একই সাথে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের আকস্মিক পরিদর্শন ও তদারকি প্রত্যাশা করছি। কেননা কেবল আইনের খড়গ উঁচিয়ে হোটেলগুলোতে কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।