প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২২, ০০:০০
বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি সংবাদের নানা শিরোনাম হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ভাগ্নের বাড়িতে মামানির অনশন, স্ত্রীর মর্যাদা পেতে ভাগ্নের বাড়িতে মামানির অনশন, ভাগ্নের সাথে মামানির বিয়ে, স্ত্রীর মর্যাদা পেতে অনশন, প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন ইত্যাদি। এমন শিরোনামে পাঠক আকর্ষিত হয়েছে ঠিকই। তবে সংবাদটি পড়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। কারণ, এটা কেবলই এক বিপন্ন নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে এক লম্পট পুরুষের লাম্পট্য প্রকাশের প্রাথমিক প্রয়াস। পুরুষটির বক্তব্য জানা গেলেই বোঝা যাবে, তার লাম্পট্যের মূল কারণ কী।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে একেবারে সাধারণ। সেটি হচ্ছে ‘ফরিদগঞ্জে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে অনশন’। সংবাদটির সূচনায় লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে প্রাক্তন স্বামীর ভাগ্নে ও বর্তমান স্বামীর বাড়িতে অনশন করছেন স্ত্রী সীমা আক্তার। গত ২৯ জুন বুধবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাওয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে ‘৯৯৯’-এ পুলিশ সংবাদ পেয়ে বিষয়টি সুরাহা করার জন্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন।
সীমা আক্তার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরমথুরা গ্রামের দেওয়ান বাড়ির মেয়ে। তিনি জানান, হাওয়াকান্দি গ্রামের বেপারী বাড়ির আনোয়ার হোসেন মানিক তার প্রাক্তন প্রথম স্বামীর ভাগ্নে। মানিকের মামা বিল্লাল হোসেনের সাথে তার ২০০৯ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মানিক বিভিন্ন কৌশলে তার আপত্তিকর ছবি তুলে হয়রানি করে ও বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে জোরপূর্বক তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে বাধ্য করে। পরিণামে প্রথম স্বামী বিল্লালের সাথে তার ৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। পরবর্তীতে মানিক তাকে বিয়ে করার কথা থাকলেও তিনি বিদেশে চলে যান এবং চার বছর প্রবাসে কাটান। পরিবারের চাপে সীমার দ্বিতীয় বিয়ে হয় রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ঢাকায় অবস্থানরত এনামুল হকের সাথে। সেখানেও বিভিন্ন কায়দায় মানিক তার ক্ষতিসাধন শুরু করেন। মানিক এক পর্যায়ে সীমার দ্বিতীয় স্বামী এনামুলের সাথে যোগাযোগ করেন এবং সীমার বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলে দ্বিতীয় সংসারও ভেঙ্গে দেন। অবশেষে প্রবাসে থাকাবস্থায় মোবাইল ফোনে মানিকের সাথে সীমা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সম্প্রতি মানিক দেশে ফিরেছেন। কিন্তু সীমাকে স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলছেন না বিধায় তার বাড়িতে সীমা অনশনের উদ্যোগ নেন এবং মানিকের লাম্পট্য সম্পর্কে সকলকে জানান দেন।
সীমার এ অনশন কর্মসূচিকে প্রতিহত করেননি তার দাবিকৃত স্বামী মানিক। তিনি ও তার পরিবারের লোকজন টের পেয়ে ঘর তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েন। আর মানিক গণমাধ্যমের লোকজনের সাথে ফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ইউপি চেয়ারম্যান পুলিশের অনুরোধে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। যদি মানিকের লাম্পট্যে সীমার দুটি সংসার ভেঙ্গে যাবার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে তার কী শাস্তি হতে পারে সেটার চেয়ে সীমাকে স্ত্রী হিসেবে ঘরে জায়গা দেয়ার বিষয়টিকে নিশ্চয়ই প্রাধান্য দেয়া হবে। কথা হলো, সমাজ তাদের কী চোখে দেখবে? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কেউ হয়তো বলবে, এমন লম্পটকে সস্ত্রীক এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়াই উত্তম। আইন কী বলে জানি না, তবে এতে অনেকের সহমত আছে বলে মনে করি।