প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর শহরের বহুল পরিচিত একটি নাম শাহজাহান চোকদার। সুধী প্রবীণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। বছর তিনেক আগে তিনি সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করতে গিয়ে পায়ে ক্ষতের কারণে দ্রুত দেশে ফিরেন এবং ডায়াবেটিক গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভোগেন। চিকিৎসক পায়ের কিয়দংশ কেটে ফেলে দিলে তিনি মোটামুটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেন। তারপর তিনি বড় ধরনের কোনো জটিলতা অনুভব করেন নি। তবে মাঝে মধ্যে পেটে ব্যথাজনিত কষ্টে ভুগছিলেন। গত রোববার রাতে এমন কষ্টে তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খালি বেড না থাকায় বাসায় ফিরেন এবং সোমবার সকালে গিয়ে হাসপাতালের পেয়িং বেডে ভর্তি হন। চিকিৎসায় তার শারীরিক অবস্থার সাময়িক উন্নতি হলেও বেলা আড়াইটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর এ মৃত্যু ৭০ বছর বয়সে সংঘটিত হলেও শহরবাসীর নিকট আকস্মিক ঠেকেছে। যার ফলে সবার মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
শাহজাহান চোকদার তাঁর শিক্ষাজীবনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন বলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফলস্বরূপ তিনি চাঁদপুর কলেজ ছাত্র সংসদে ১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষে জিএস এবং ১৯৭৮-৭৯ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হিসেবে দায়িত্বপালনের সুযোগ পান। তাঁর কর্মকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে এমন একটি শহীদ মিনার নির্মিত হয়, যেটি চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে ব্যবহৃত হয় দীর্ঘদিন। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে চাঁদপুর রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের পূর্বদিকে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় দু যুগ ধরে চাঁদপুর কলেজের ওই শহীদ মিনারটি ছিলো চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। তিনি শিক্ষাজীবনে অর্জিত নেতৃত্বের গুণাবলিতে ও বহুবিধ সামাজিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে চাঁদপুর পৌরসভার এক মেয়াদের কমিশনার নির্বাচিত হন এবং চাঁদপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে সুনামের সাথে দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন করেন। তিনি ছিলেন একজন কারা নির্যাতিত রাজনৈতিক নেতা।
শাহজাহান চোকদার বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.ডব্লিউ.এম. তোয়াহা মিয়ার কর্মকালে ১৯৮৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর এবং অধ্যক্ষ প্রফেসর ইকবাল হোসেনের কর্মকালে ২০০৮ সালের ১মার্চ এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলনী উৎসবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করতে গিয়ে। তিনি সফলভাবে দুটি উৎসব আয়োজনে বিশেষ ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে বিপুলভাবে প্রশংসিত হন। তিনি সম্প্রতি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি আয়োজনের উদ্যোগেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু এ আয়োজনের প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্বেই তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। জীবন সায়াহ্নে তিনি একটি কষ্টে ভুগছিলেন এবং সেটি ছিলো জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান না পাওয়া। এজন্যে তিনি তাঁর আক্ষেপ, অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ চাঁদপুর কণ্ঠে বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন।
শাহজাহান চোকদার মৃত্যুর অমোঘ নিয়মের কাছে হার মানলেন, যেটি মানুষসহ সকল জীবকেই মানতে হয়। তারপরও আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে শোকের গভীর অনুরণন সৃষ্টি হয়েছে আপাত দৃষ্টিতে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর কারণে। তাঁর তিন মেয়ের সকলে সুপাত্রে পাত্রস্থ হয়েছেন, যাদের দুজনই প্রবাসী। সেজন্যে তাঁর পরিবারের পাশে কোনো সহায়তা নিয়ে কারো দাঁড়ানোর চেয়ে তাঁর জন্যে একটি স্মরণসভা আয়োজনের উদ্যোগ হতে পারে যথার্থ। এক্ষেত্রে তিনি যে গুয়াখোলা রোডের বাসিন্দা, সে এলাকার সক্রিয় ক্রীড়া সংগঠন কিংবা চাঁদপুর সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ উদ্যোক্তা হতে পারে বলে আমরা মনে করি। আর পৌরসভা এগিয়ে আসলে সেটি হবে উত্তম।