প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২২, ০০:০০
মেয়েদের নিয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা ও উদাসীনতা
ফরিদগঞ্জের পৌর এলাকায় গত ২২ জুন বুধবার এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সে নিজ বাড়ির পুকুরে গোসল করতে গিয়ে এই ধর্ষণের শিকার হয়। কেরোয়া গ্রামের আব্দুস ছাত্তার বেপারীর ছেলে, এক সন্তানের জনক সোহেল (২৬) এই কিশোরীটিকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় কিশোরীটির মা বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলে এসআই মোঃ নাছির উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনার ছয় ঘন্টার মধ্যে ধর্ষক সোহেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। আর কিশোরীটিকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্যে বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে মেডিকেলে প্রেরণ করেন।
|আরো খবর
আমরা বিশ্বাস করি, ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের তৎপরতায় ধর্ষক সোহেলের উপযুক্ত বিচার হবে। প্রসঙ্গক্রমে মেয়ে সন্তানদের সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতনতা ও উদাসীনতা নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
নানা প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে কিংবা সুস্থভাবে জন্মানো শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে শৈশব অবস্থায় প্রায় প্রতিটি মা-বাবাসহ বড় ভাই-বোন কিংবা অন্য কোনো নিকটজনের আদর-যত্নের উল্লেখযোগ্য ঘাটতি থাকে না। কিন্তু শিশুদের বয়স বাড়তে থাকলে ক্রমশ মা-বাবাসহ অন্যদের আদর-যত্নের ঘাটতিও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে অভিভাবকদের সচেতনতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হতে থাকে। আর অনেক অভিভাবকতো সন্তানদের প্রতি উদাসীন মনোভাব প্রদর্শন করতে থাকে। এতে শিশু সন্তানদের প্রারম্ভিক বিকাশ যথাযথভাবে হয় না এবং মানুষের মতো মানুষ হওয়াসহ সুশিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠার কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন হয় না।
শিশু সন্তানদের মধ্যে ৬-৭ বছর বয়সী কিংবা তদূর্ধ্ব বয়সী মেয়ে সন্তানদের প্রতি যদি কোনো অভিভাবক অসচেতন, উদাসীন থাকেন কিংবা যত্নবান না হন, তাহলে তার যথার্থভাবে বেড়ে ওঠাই শুধু ব্যাহত হয় না, তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। সে বখে যাওয়া, বিপথগামী হওয়া, নানা ধরণের দুর্ঘটনা ও শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন, বিশেষ করে যৌন হয়রানির শিকার হয়। এর মধ্যে পানিতে ডোবাসহ নানা দুর্ঘটনা, উত্ত্যক্ত হওয়া, প্রেমাসক্ত হওয়া, মাদকাসক্ত হওয়া, ধর্ষণ চেষ্টা কিংবা ধর্ষণের শিকার হবার ঘটনাতো তো অহরহই ঘটছে। আর মেয়েটি যদি কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী হয়, তাহলে তো তার নিরাপত্তা ঝুঁকি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের দেশে প্যারেন্টিং এডুকেশন নেই বললেই চলে। যার ফলে সন্তানদের প্রতি পিতা ও মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিংবা অন্য কোনো স্বীকৃত ও মানসম্পন্ন পদ্ধতিতে কেউ শিখে না বললেই চলে। যা শিখে তা কেবল দেখে দেখে কিংবা শুনে শুনে শিখে। এটা যথেষ্ট নয়। সেজন্যে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি, নিরাপত্তার ঝুঁকি প্রতি মুহূর্তেই থাকে প্রকট থেকে প্রকটতর। পিতা-মাতাসহ অন্য অভিভাবকদের সচেতনতা ও সার্বক্ষণিক নজরদারিই এ ঝুঁকিকে হ্রাস করতে পারে বলে আমরা মনে করি।