প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২২, ০০:০০
‘ব্রিজের উপরেও তীব্র যানজট’। এটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংক্ষিপ্ত সচিত্র প্রতিবেদনের শিরোনাম। এ শিরোনামেই প্রতিবেদক পরোক্ষভাবে বিস্ময়সূচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। তার দৃষ্টিতে যে কোনো মূল সড়কে যানজট হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ব্রিজে সেটি হওয়া অস্বাভাবিক। আলোকচিত্র ধারক ও প্রতিবেদক হিসেবে মিজানুর রহমান তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, মানুষ ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সইতে পারছে না চাঁদপুর পৌরসভার রাস্তাঘাট। বিকল্প রাস্তা তৈরি না হওয়ায় চাঁদপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যানজটের তীব্রতায় এখন নতুনবাজার-পুরাণবাজার ব্রিজের ওপর পর্যন্ত চলে এসেছে এ যানজট। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
চাঁদপুর শহরকে এক সময় এক রাস্তার শহরই বলা হতো। ষাটের দশকের পূর্বে চাঁদপুর শহরে চৌধুরী মসজিদ থেকে তালতলা পর্যন্ত বিস্তৃত কুমিল্লা রোডই ছিলো প্রধান ও দীর্ঘ সড়ক। আজকে চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় শপথ চত্বর থেকে সোজা পূর্বদিকে যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক মিশন রোড হয়ে ফায়ার সার্ভিসের নিকটে নিউ ট্রাক রোডের সাথে গিয়ে মিশেছে, সেটি আগে ছিলো না এবং সেখান থেকে সোজা পূর্ব দিকে যে বঙ্গবন্ধু সড়ক চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে গিয়ে মিশেছে, সেটির অস্তিত্ব নব্বইর দশকের আগে ছিলো না। এ দুটি সড়কের পাশের বর্তমান বাসিন্দারা চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কিংবা নৌকাযোগে বাসা-বাড়িতে যাতায়াত করতো। উপরোক্ত সড়কগুলো যদি তৎকালীন দূরদর্শী জনপ্রতিনিধিরা একের পর এক নির্মাণ না করতেন, তাহলে চাঁদপুর শহরের অবস্থা যানবাহনের বর্তমান চাপে কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছতো সেটা চোখ বুঁজে একটু ভাবলে রীতিমত শিহরিত হবার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
চাঁদপুর শহরে বড় স্টেশন থেকে নদীর পাড় হয়ে মেথা রোডের দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত একটি সড়ক রয়েছে, সেখান থেকে সংযোগ নিয়ে ডাকাতিয়ার পাড় দিয়ে লন্ডন ঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা গেলে, চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের দক্ষিণ পাশে বিদ্যমান রেলওয়ের ফিডার রোড থেকে সোজা পূর্ব দিকে নিউ ট্রাক রোড পর্যন্ত নূতন সড়ক নির্মাণ করা গেলে, স্বর্ণখোলাস্থ চাঁদপুর বাস টার্মিনাল থেকে পশ্চিম দিকে চাঁদপুর লঞ্চঘাট পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে নির্মিত সড়কগুলোর সংযোগ স্থাপন করা গেলে চাঁদপুর শহরের প্রধান সড়ক ও যানজট এড়িয়ে বিকল্প সড়কযোগে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি হবে বলে পর্যবেক্ষক ও বিজ্ঞজন মনে করছেন।
চাঁদপুর শহরে বিদ্যমান সড়কগুলো মানুষের চাপ সহ্য করতে পারলেও যানবাহনের চাপ সহ্য করতে পারছে না। এ শহরের সড়কে অটোবাইকের আধিক্য মানুষের আধিক্যকে হার মানিয়েছে। গড়ে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে প্রধান সড়কগুলোতে একটি অটোবাইকের পেছনে আরেকটি অটোবাইক চলে, সেটাতে যাত্রী পূর্ণ হোক বা না হোক। সেজন্যে যাত্রীর প্রয়োজনে অটোবাইক যেখানে সেখানে থামায়, যেটি যানজটের অন্যতম কারণ। বিকল্প সড়ক নির্মাণ দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল পরিকল্পনার বিষয়। তার আগে এ শহরবাসীসহ শহরে যাতায়াতকারী মানুষকে যানজট থেকে পরিত্রাণ দিতে হলে অটোবাইকের সংখ্যা সীমিতকরণ, থামার তথা বিরতির জায়গা নির্ধারণ, চলাচল শৃঙ্খলাপূর্ণ করার জন্যে সড়কে সিসিটিভি লাগানো ও ফুটেজ দেখে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ ও চাহিদানুযায়ী ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।