প্রকাশ : ৩১ মে ২০২২, ০০:০০
গতকাল চাঁদপুর (বড়) স্টেশনে রেলওয়ের পক্ষ থেকে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অনিয়ম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘বৃষ্টির কল্যাণে অনিয়ম দৃশ্যমান’ শীর্ষক সেলিম রেজার পরিবেশিত উক্ত প্রতিবেদনে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর রেলওয়ে বড় স্টেশনের দ্বিতীয় প্লাটফর্ম তৈরির কাজ চলমান। প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা যায়, এক মাসের বেশি হলো দুপাশে ওয়াল তৈরির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কয়েক দিন হলো বালু দিয়ে করা হয় ভরাটের কাজ। কিন্তু ঠিকাদারের বা কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবে নির্মাণকাজের ত্রুটি থাকায় গতকাল (রোববার) বৃষ্টিতে প্রায় ৫০-৬০ ফুট ধসে পড়ে এবং আরো ৫০ ফুটের মধ্যে ফাটল ধরে। হিসেবে ১০০ ফুটই পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। তাই অনেকেই বলছে, বৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহতা’লার রহমত। বৃষ্টি না হলে এতোবড় অনিয়ম কেউ দেখতো না। তাই আল্লাহপাক যা করেন আমাদের ভালোর জন্যেই করেন।
প্রায় সবার জন্যে ভালো হলেও চাঁদপুর বড় স্টেশনের ঠিকাদার বা তার নিয়োজিত লোকজনের জন্যে যে রোববারের বৃষ্টিটা অকল্যাণকর হয়েছে, সেটা হলফ করেই বলা যায়। এ বৃষ্টিটা না হলে ঠিকাদারের অনিয়মটা ধামাচাপাই পড়ে যেতো। তিক্ত হলেও সত্য এই যে, চাঁদপুরে অন্যান্য বিভাগের কাজে কমণ্ডবেশি তদারকি হলেও রেলওয়ের উন্নয়নমূলক কাজসমূহ তদারকি হয় না বললেই চলে। সেজন্যে অধিকাংশ কাজেই অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় এবং এ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও কর্তৃপক্ষের সাড়া দৃশ্যমান হয় না। তাই অনেকে বলেন, রেলওয়ের অনিয়ম যেন কর্তৃপক্ষের গা-সওয়া হয়ে গেছে।
আমাদের দেশে কিছু ঠিকাদার বা কন্ট্রাক্টর আছেন, যারা বড় ধরনের কাজ প্রাপ্তির জন্যে টেন্ডারে অংশ নেন এবং ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) পেলে সে কাজ সাব-কন্ট্রাক্টে দিয়ে দেন কিংবা পুরো বিক্রি করে দেন। এমনটি চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের উন্নয়ন কাজেও লক্ষ্য করা গেছে। এই রেলপথের উন্নয়নে ২০১২ সালে ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ অর্থে গৃহীত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয় ৫২ কিলোমিটার মেইন লাইন, ৫ কিলোমিটার লুপ লাইন, ৫৬টি ব্রিজ, সকল স্টেশন ভবন সংস্কার, কালার লাইট সিগন্যাল ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন এবং গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে স্টেশনগুলো নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। এ কাজ পায় ভারতের কালিন্দিসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালের ৩০ জুন এ কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ছয়বার কাজ শুরু করে আবার বন্ধ রাখা হয়। যার ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচবার সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কাজ সম্পাদনে বিলম্বের কারণ ছিলো অন্যটি। ২০১৪ সালে কালিন্দিসহ পাঁচটি কোম্পানি চট্টগ্রামস্থ আজমাইন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির কাছে কাজটি বিক্রি করে দেয়। এতে যা হবার তাণ্ডই হয়েছে, প্রত্যাশিত মানে কাজটি সমাপ্ত হয়নি। অনিয়ম কতো প্রকার ও কীকী তার অনেকটাই দেখা গেছে তাদের কাজে।
চাঁদপুর (বড়) স্টেশনে চলমান উন্নয়ন কাজটি মূল ঠিকাদার সাব কন্ট্রাক্টে দিয়ে দিয়েছেন কিংবা বিক্রি করে দিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। এমনটি মনে হবার কারণও রয়েছে। কেননা বৃষ্টির পানিতে প্লাটফর্মের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে গেছে এবং ফাটল ধরেছে। সিমেন্ট-বালির সংমিশ্রণ এবং রডের ব্যবহারসহ আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ যদি সঠিকভাবে করা হয়, তাহলে এক-দেড় ঘন্টার বৃষ্টিতে এক মাস পূর্বে নির্মিত দেয়ালের এমন অবস্থা হতে পারে না। আমরা এ ব্যাপারে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। সাথে সাথে ঠিকাদার নির্বাচন, কার্যাদেশপ্রাপ্ত মূল ঠিকাদারের কাজ বিক্রি কিংবা অযোগ্য ব্যক্তিকে সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগের বিষয়টিতে রেল কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি ও তদারকি জোরদার করা উচিত বলে আমরা মনে করি।