প্রকাশ : ২৯ মে ২০২২, ০০:০০
লঞ্চঘাটে উচ্ছেদ হোক নিয়মিত
চাঁদপুর লঞ্চঘাটকেন্দ্রিক অবৈধ দখলদারিত্ব দীর্ঘদিনের। এখানে উচ্ছেদ অভিযান হয় দীর্ঘসময়ের ব্যবধানে। এমন অভিযানের ফলাফল টেকসই হয় না। কারণ, একদিকে চলে উচ্ছেদ, অন্যদিকে অবৈধ দখলদারদের পাঁয়তারা চলে পুনরায় দখলের।
|আরো খবর
গত ২৬ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর লঞ্চঘাটের ভেতরে পন্টুন সংযুক্ত জেটির আশপাশে যে ক’টি অবৈধ স্থাপনা ছিলো সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান তদারকি করেছেন বিআইডব্লিউটিএ’র হেড অফিস থেকে আগত দু’জন কর্মকর্তা। এ বিষয়ে চাঁদপুর নদী বন্দর ও পরিবহণ কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম জানান, এ অভিযান আমাদের নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক। লঞ্চঘাটের সৌন্দর্য বর্ধনে বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণ করছি। এছাড়া নৌপথের যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় এবং নির্বিঘ্নে নিরাপদে লঞ্চ টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে সে লক্ষ্যেই টার্মিনালের আশেপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গাড়ি পার্কিং ইয়ার্ড সংলগ্ন স্থাপনাগুলো আমরা উচ্ছেদ করেছি।
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহণ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদেরকে লঞ্চঘাটে তাদের উচ্ছেদ অভিযানকে নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক বললেও প্রকৃতপক্ষে শনিবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর চাঁদপুর আগমন উপলক্ষে যে উক্ত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই। তবে পর্যবেক্ষকরা এই অভিযানের ফলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। যাত্রীরা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে লঞ্চে যাতায়াত করতে পেরে বিআইডব্লিউটিএকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
দেখার বিষয় হচ্ছে, আজ রোববার থেকে লঞ্চঘাটে পুনরায় অবৈধ দখলদারিত্বের কোনো আলামত শুরু হয় কি না। আমাদের জানা মতে, বিআইডব্লিউটিএ’র শ্রমিক/কর্মচারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগসাজশে কিছু লোকজন অবৈধ দখলদারিত্ব কায়েম করে। এ দখলদারিত্বে উচ্ছেদ অভিযান যেনো নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক স্বরূপ না হয় সেজন্যে উক্ত নেতৃবৃন্দের তদবির থাকে জায়গা মতো। এ তদবিরে ঠেকে যায় বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ। এর ফলে একবার অভিযানের পর আরেকটি অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধান হয়ে যায় অনেক। এটাই অবৈধ দখলদারদের জন্যে এক প্রকার প্রশ্রয় এবং প্রচ্ছন্নভাবে কারো অর্থপূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা।
আমরা মনে করি, চাঁদপুর লঞ্চঘাটসহ অন্য যে কোনো স্থানে অবৈধ দখলদারিত্বের উচ্ছেদ অভিযান হতে হবে সত্যিকার অর্থেই রুটিন ওয়ার্ক। উচ্ছেদ অভিযানের ২/৩ দিন বা এক সপ্তাহের মধ্যে কিংবা ততোধিক সময়ের মধ্যে কেউ যদি অবৈধ দখলের প্রয়াস চালায়, তাহলে তাৎক্ষণিক সেটা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে এ ভূমিকা রাখা যায় না লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ চাইলেই পাওয়া যায় না। সেজন্যে এমন প্রাপ্তির বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিতকরণে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় কিংবা আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যায় সেটা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। তবেই চাঁদপুর লঞ্চঘাটে শুধু নয়, অন্য যে কোনো স্থানে উচ্ছেদ অভিযানের ফলাফল হবে টেকসই। অন্যথায় সেটি হয় সাময়িক ও লোক দেখানো তথা আইওয়াশরূপী কার্যক্রম। এমনটি সঠিক নয় ও কাম্য নয়।