প্রকাশ : ২০ মে ২০২২, ০০:০০
ভাত বাঙালি ও বাংলাদেশীদের প্রধান খাদ্য। এমন অনেক মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়, যাদের ভাতছাড়া এক বেলাও চলে না অর্থাৎ তারা সকাল, দুপুর ও রাতে ভাতই খায়। তরকারি ছাড়া ভাত খাওয়া কষ্টকর হলেও ভাতপাগাল মানুষগুলো লবণ-মরিচ দিয়ে খেয়েও তৃপ্তি খুঁজে পায়। এমন মানুষদের মধ্যে জেলেরা যে আছে, সেটা ধারণা করা যায়। বোধকরি সেজন্যে সরকার মার্চ-এপ্রিল দু মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের নির্দিষ্ট কিছু নদীতে অভয়াশ্রম চলাকালে এবং আরো কিছু সময় সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট জেলেদের মাথাপিছু মাসিক ৪০ কেজি করে চাল দেয়। জেলেরা মার্চ-এপ্রিল দু মাস মাছ ধরায় বিরত থাকলেও চাল পায় চার মাসের। দু মাসের অর্থাৎ ৮০ কেজি করে দু কিস্তিতে জেলেদের মাঝে এ চাল বিতরণ করেন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। সকল জেলেই কিন্তু এ চাল পায় না, নিবন্ধিত জেলেরা পেয়ে থাকে। জেলেদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির অনুরোধে/চাপে মেয়র/চেয়ারম্যান/মেম্বাররা তাদের ইচ্ছায়/অনিচ্ছায় কিছু অনিয়ম করে থাকেন। তবে এমনটি গড়পরতা সকল চেয়ারম্যান/মেম্বার করেন-এমনটি বলা যায় না। এই অনিয়মে পেশায় জেলে নয় এমন কিছু লোক (যেমন নারী গৃহকর্মী, ছোট-বড় দোকানদার, দিনমজুর কিংবা নিম্ন পেশার লোক) নিবন্ধিত জেলে সেজে যায়। এদেরকে অর্থাৎ অপ্রকৃত জেলেকে ৮০ কেজির পরিবর্তে যদি ৬০ কেজি চাল দেয়া যায় এবং বাকি ২০ কেজি চাল অসাধু চেয়ারম্যান/মেম্বাররা কমিশন (!) হিসেবে আত্মসাৎ করার সুযোগ পান, তাতে মন্দ কী-এমন প্রচ্ছন্ন ভাবনা কাজ করে অনেকের মাঝে।
সরকার এমন অনিয়মের কথা জেনে বা অন্য কোনো কারণে হোক, কোনো পৌরসভা/ইউনিয়নের নিবন্ধিত সকল জেলের জন্যে শতভাগ চাল বরাদ্দ দেয় না, কিছুটা কম দেয়। কম বরাদ্দপ্রাপ্ত চাল বিতরণের সময় বাধে ঝামেলা। সরকারের পক্ষ থেকে প্রেরিত ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে এ চাল বিতরণকালে উদ্ভূত ঝামেলা নিরসনে সমন্বয় করে কেউ চাল বিতরণ করেন, আবার কেউ অপ্রকৃত অথচ নিবন্ধিত জেলেদেরকে চাল কম দিয়ে বাকিটা আত্মসাতের চেষ্টা করেন। এটা কেউ ম্যানেজ করতে পারেন, আবার কেউ পারেন না। এ ম্যানেজের প্রক্রিয়ায় কেউ সফল হন, আবার কেউ হন না। যারা হন না তারাই সোস্যাল মিডিয়া বা নিউজ মিডিয়ায় বিরূপতার শিকার হন। চাঁদপুর জেলার মেঘনা/পদ্মার তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান/মেম্বারদের কেউ কেউ এ বিরূপতার শিকার। এদের একজন চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন কল্যাণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনি পাটোয়ারী।
কল্যাণপুর ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৭৩৮ জন। এদের মধ্যে ৬৭ জনের জন্যে কোনো চাল বরাদ্দ আসেনি, এসেছে ৬৭১ জনের জন্যে ৫৩ দশমিক ৬৮০ মেট্রিক টন। তার মধ্যে আবার দেড় টন চাল কম পাওয়া যায়। এ খবর জেনে সদর ইউএনও ইউনিয়ন পরিষদের দুটি গুদাম সিলগালা এবং মামলা করার নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ তামিল করা হয়।
আমাদের মতে, জেলে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম ত্রুটি রেখে এবং নিবন্ধিত সকল জেলের জন্যে শতভাগ চাল বরাদ্দের ব্যবস্থা না করলে জেলে-চাল বিতরণে পুরোপুরি সুষ্ঠুতা নিশ্চিত হবে না। শাখাওয়াত হোসেন রনির মতো স্বল্প সংখ্যক অসাধু ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বাররা নিতান্তই চালের লোভেই অনিয়মের আশ্রয় নেন, না এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নিহিত রয়েছে, সেটা জানার জন্যে অবশ্যই তদন্ত করা দরকার। আমরা মৎস্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।