প্রকাশ : ১৭ মে ২০২২, ০০:০০
হাসপাতালটি কি রোগীবান্ধব, না দালালবান্ধব?
সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতাল সকল প্রকার রোগীর কল্যাণে সর্বাত্মক নিবেদিত হোক-এটা শুধু রোগী নয়, সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু এমন প্রত্যাশা পূরণে কতোটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্তরিক থাকে সেটাই দেখার বিষয়। হাসপাতাল পরিচালনায় সুষ্ঠুতা নির্ণয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি বা কর্মকর্তার পরিদর্শন ও তদারকি না থাকলে যা হবার তা-ই হয়। বিশৃঙ্খলা, কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ থাকা এবং রোগীদের ঘিরে কিছু অসাধু চিকিৎসক, দালালদের নানামুখী তৎপরতা পরিলক্ষিত না হয়ে পারে না। যেটি বর্তমানে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সবচে’ বড় হাসপাতাল ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
|আরো খবর
এ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে একটি বড় সংবাদ, যার শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জে প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালদের উৎপাত : সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা ॥ ডাক্তাররাই উদ্বুদ্ধ করছে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে’। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিন দিন দালালদের উৎপাত বেড়েই চলছে। এদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে উক্ত হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা কেন্দ্র এই সরকারি হাসপাতালটির অবস্থান পৌর এলাকায়। এর আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে নামসর্বস্ব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোর নিয়োজিত দালালরা সরকারি হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে প্রাইভেট ক্লিনিকের ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করে থাকে। তাদের প্ররোচনায় নিঃস্ব হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত ক্লিনিক মালিকদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এসব দালালের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেয় না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীদের অভিযোগ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে ডাক্তাররা রহস্যজনক কারণে প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার জন্যে ইঙ্গিত করে। এই হাসপাতালের প্রধান কর্তাব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী জানান, দালালদের বিষয়টি ইতোমধ্যে আমাদের নজরে এসেছে। আমরা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোকে চিঠি দিয়েছি এসব বন্ধ করার জন্যে। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর দালালরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আমরা কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করে দালালদের দৌরাত্ম্য নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জের ইউএনও তাসলিমুননেছা বলেছেন, দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
আমরা মনে করি, দালালদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হলে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীবান্ধব আর থাকবে না, এটি হয়ে যাবে দালালবান্ধব। আমরা এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। তিনি আকস্মিক পরিদর্শন করে এ হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য অবলোকন ও উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সেমতে তিনি ইউএনও এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রণোদিত করতে পারেন। আমাদের বিশ্বাস, তিনি সেটি অবশ্যই করবেন।