প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
বাজারগুলোতে এতো চুরি কেনো?
চাঁদপুর জেলার প্রসিদ্ধ বাজারগুলোর মধ্যে মতলব উত্তর ও মতলব উপজেলার বাজারগুলোতে অন্যান্য উপজেলার বাজারগুলোর চেয়ে সাম্প্রতিক ক’বছরে বেশি চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। উক্ত বাজারগুলোতে চোর-ডাকাতরা হানা দিয়ে সম্ভবত পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সড়ক ও নৌপথকে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারে বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়টি পর্যবেক্ষকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্ঞানগোচরে নিশ্চয়ই রয়েছে বলে আমাদের ধারণা।
|আরো খবর
গত ২৭ এপ্রিল বুধবার রাতে মতলব উপজেলার মুন্সিরহাট বাজারে ঘটেছে চুরির ঘটনা। চোরের দল এ বাজারে অবস্থিত সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের উপ-শাখায় হানা দেয়। তারা জানালার গ্রিল কেটে ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে এবং সিসি ক্যামেরায় কালো রং স্প্রে করে তাদের অভিযান সফল করে। পরে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকের ভোল্ট খুলে ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৩ টাকাসহ সিসিটিভি ফুটেজের রেকর্ড হার্ডডিক্স নিয়ে নির্বিঘ্নে চম্পট দেয়।
একই উপজেলার প্রসিদ্ধ নারায়ণপুর বাজারে পরপর তিন রাতে চুরি হয়েছে। ২৪, ২৫ ও ২৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে তিনটি দোকানে চুরির ঘটনায় বাজার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীসহ অন্য ব্যবসায়ীরা উক্ত বাজারস্থ বণিক ও জনকল্যাণ সমিতি নেতৃবৃন্দের নিকট ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা দাবি করেন। এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি মোঃ সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদার জানান, ঈদকে সামনে রেখে সংঘবদ্ধ চোরের দল এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে মনে হয়। তিনি আরো জানান, সকালে বাজার পাহারাদার চলে যাওয়ার পর দোকানদাররা আসার আগে প্রায় এক ঘন্টা বাজার জনশূন্য থাকে। চোরেরা এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।
পাহারাদার থাকলেও যে বাজারগুলোতে চুরি/ডাকাতি হয় না, তেমনটি কিন্তু নয়। সংঘবদ্ধ চোর বা ডাকাতের দল পাহারাদারদের আটক করে/মেরে ফেলে কিংবা বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে তাদের কার্যসিদ্ধি করে। এমনটি সব বাজারে হয় সেটি ভাববার কানো সুযোগ নেই। যেসব বাজার কমিটির লোকজন তাদের নিযুক্ত পাহারাদারদের গতিবিধি, আচরণ, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালনের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ না করে এবং পাহারাদারদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা না করে, সেসব বাজারের পাহারাদারদের কারো না কারোর মধ্যে পদস্খলন ঘটবেই, বিপথগামিতা তাকে আচ্ছন্ন করবেই কিংবা সর্ষের মধ্যে ভূত থাকবেই।
সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও কোনো বাজার বা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ নিরাপদ যে ভাবা যাবে না সেটাও চোর/ডাকাতরা বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের কৌশলী কর্মকাণ্ড দ্বারা। তাহলে নিরাপত্তা কোথায় কিংবা কোন্ প্রক্রিয়ায় সেটি নিয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হয়েছে। এই ভাববার বিষয় নিয়ে পুলিশ ও বাজার কমিটিগুলোকে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।
আমরা মনে করি, ব্যক্তিগত, আর্থিক, ব্যবসায়িক, সামাজিক ইত্যাদি নিরাপত্তায় প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব সচেতনতা সর্বাগ্রে জরুরি। তারপর আসবে সামষ্টিক সচেতনতা, যাতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায় নানা মত এবং তার সমন্বয় সাধন করা। পর্যায়ক্রমে সকলের অবদান ও অনুদানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কাজটি খুব কমই সহজতর হয়, বরং কঠিন হয়েই দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় সামষ্টিক নিরাপত্তার কাজ জটিল, সময়সাপেক্ষ, কমণ্ডবেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনের নিরিখে বাধ্যবাধকতা আরোপের ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ কিংবা কাউন্সেলিংয়ের বিষয়টি প্রায়শই গৌণ থাকে, মুখ্য হয় না-যেটা আমাদের পর্যবেক্ষণ। এটা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক নয়।