প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
কেবল আইন থাকলেই হবে না, এর প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেমন সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হয়, তেমনি উপকারভোগীকেও সচেতন হতে হয়। এক পক্ষীয় সক্রিয়তাণ্ডসচেতনতা দিয়ে কিন্তু কোনো আইনের সুফল যথার্থভাবে প্রতিভাত হয় না। যেমন ধরা যাক, ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯। পণ্যের ক্রয় বা বিভিন্ন সেবা গ্রহণের সময় ভোক্তা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হওয়ার প্রেক্ষিতে ভোক্তাদের সুরক্ষা দিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংক্ষেপে ভোক্তা অধিকার আইন প্রণয়ন করে। এই আইনে একজন ভোক্তার ভোগযোগ্য অধিকারসমূহ উল্লেখ আছে। কিন্তু এই আইন প্রণয়নের পর এক যুগ অতিক্রান্ত হলেও ভোক্তাদের নব্বই শতাংশেরও বেশি সেটি জানে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এই আইন প্রণয়নের জন্যে কনজ্যুমারস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার পর সাফল্য করায়ত্ত হলে তাদের কার্যক্রম কেন্দ্রেই অনেকটা কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে। এ আইন সম্পর্কে ভোক্তাদের ব্যাপকভাবে জানান দেয়া এবং সচেতন করে গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাবের ধারাবাহিক কর্মসূচি এখন তেমন চোখে পড়ে না। সরকারের পক্ষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর উক্ত আইনটি প্রয়োগে কাজ করায় ক্যাব বস্তুত নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে বলে অনেকের ধারণা। ক্যাবের এই আপাত নিষ্ক্রিয়তায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা, কার্যত সেভাবে এগুতে পারছে না বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কার্যালয় এখনও জেলা পর্যায়ে থাকায় কার্যক্রমের ব্যাপকতা যেভাবে দৃশ্যমান হবার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে উক্ত অধিদপ্তরের যে কার্যক্রম দেখা যায়, তাতে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতার হার অনেক কম দেখা যায়। তারপরও সম্প্রতি ২-৪ জন সচেতন ভোক্তার সক্রিয়তা আশার সঞ্চার করেছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন আশাসঞ্চারী সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম হয়েছে, ‘সচেতন যাত্রীর অভিযোগ : বেশি দামে টিকেট বিক্রি করায় সোনার তরী লঞ্চের জরিমানা’।
এ সংবাদে লিখা হয়েছে, একজন ভোক্তা (যাত্রী) গত ৩ এপ্রিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি ছিলো, চাঁদপুর-ঢাকা রূটের সোনার তরী লঞ্চের বিরুদ্ধে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে টিকেট বিক্রি প্রসঙ্গে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দোষ স্বীকার করলে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ মোতাবেক আট হাজার টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়। আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ হিসেবে দু হাজার টাকা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগকারী যাত্রীকে প্রদান করা হয়। সাথে সাথে কোনোভাবে যেনো বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া না রাখা হয় সে ব্যাপারে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়।
চাঁদপুর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রূটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর যে ক’টির মালিক বহুল পরিচিত ও প্রভাবশালী, সোনার তরী তার একটি। এটি যখন সচেতন যাত্রী (ভোক্তা)-এর অভিযোগের আলোকে ভোক্তা অধিকার আইনে জরিমানার শিকার হয়েছে, তাহলে অন্যান্য লঞ্চও সচেতন ভোক্তার অভিযোগ থেকে রেহাই পাবে বলে মনে হচ্ছে না। সেজন্যে আসন্ন ঈদসহ অন্যান্য সময়ের ভিড় চলাকালে লঞ্চগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাতে বেশি ভাড়া না রাখা হয় সে ব্যাপারে কমণ্ডবেশি সতর্কতা সঞ্চারিত হবে। আমরা ভোক্তা অধিকার আইনে জরিমানার পঁচিশ শতাংশ অভিযোগকারীর প্রাপ্তির বিষয়টিকে প্রণোদনা স্বরূপ মনে করছি। আশা করি এতে ভোক্তারা উৎসাহিত হবেন এবং সচেতনতাও বাড়বে অনেক।