প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
আধুনিক ও উন্নত ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা খুবই অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। কেউ তার কর্মস্থলে, বাসা-বাড়িতে অনিবার্য কারণে অনুপস্থিত থাকলেও যাতে চলমান পরিস্থিতি প্রযুক্তির সহায়তায় পর্যবেক্ষণ করতে পারে, সেজন্যে সিসিটিভি ক্যামেরা মোক্ষম মাধ্যম। সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের প্রধানত তিনটি সুবিধা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে : অবর্তমানে পর্যবেক্ষণ করা, দূরবর্তী জায়গা থেকে লাইভ মনিটর করা ও কোনো দুর্ঘটনায় রেকর্ডিং দেখার ব্যবস্থা। বর্তমানে ওয়াইফাই আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে দূর থেকে পর্যবেক্ষণকারী ব্যক্তি প্রয়োজনীয় মৌখিক নির্দেশনা প্রদানের সুযোগও করায়ত্ত করেছেন।
বাসা, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, গোডাউন, স্কুল-কলেজ নিরাপদে রাখতে, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই অনিয়ম, দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ কিংবা রোধে সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে বলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। করোনাকাল শুরু হবার পূর্বে আর্থিক সামর্থ্য ভালো ছিলো বলে বিভিন্ন স্থানে এই ক্যামেরা লাগানোর হিড়িক পড়ে যায়। তারপর আর্থিক সামর্থ্যরে প্রশ্নে এই ক্যামেরা লাগানোর গতি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।
চাঁদপুর জেলায় সর্বপ্রথম বেসরকারি উদ্যোগে চাঁদপুর শহরের চৌধুরী পাড়া নামে ছোট্ট আবাসিক এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের দৌরাত্ম্য, ইভটিজিং, দিন-রাতের চুরি-ছিনতাই রোধের প্রয়োজনে উক্ত এলাকার বাসিন্দারা চাঁদা দিয়ে এই ক্যামেরা লাগায়। ক’বছর ভালোভাবেই চলেছে এই ক্যামেরা। যদিও অপকর্মকারীরা ক্যামেরার সংযোগ রক্ষাকারী তার কেটে ফেলা, ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলার মতো কাজটি মাঝে মধ্যে ঠিকই করেছে। এক পর্যায়ে এই ক্যামেরা ম্যানটেন করা বা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়লে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বর্তমানে আবার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই শহরের গুয়াখোলা আবাসিক এলাকায় গুয়াখোলা ক্রীড়া চক্রের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে সেগুলো পরিচালনায়ও খেতে হচ্ছে হিমশিম। এই ক্যামেরার কল্যাণে জেলা ও দায়রা জজের বাসায় চুরি সংঘটিত হবার কয়েক ঘন্টার মধ্যে চোর শনাক্ত হয় ও মালামাল উদ্ধার হয়। এমন সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে জেলা পুলিশ চাঁদপুর পৌরসভা ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের মুখ্য অর্থায়নে চাঁদপুর শহরের নূতনবাজার এলাকায় প্রায় ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগায়। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিলের প্রশ্নে এ ক্যামেরা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হয়।
অনেকটা আনন্দের সংবাদ হলো এই যে, অতি সম্প্রতি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ১২টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ ও লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপকর্ম, মাদক পাচার, যাত্রী হয়রানি ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বিআইডব্লিউটিএ ও চাঁদপুর নৌ থানা পুলিশ সরকারি খরচে লাগিয়েছে এসব ক্যামেরা। চলমান রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যে যথার্থ হয়েছে সেটি বলতেই হবে। উদ্যোগটি টেকসই হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ, সরষের ভেতরের ভূতেরা এ ক্যামেরার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে যেতে পারে। সেজন্যে তীক্ষè সচেতনতা ও সাবধানতা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।