প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
নামের খসম কর্মকর্তাদের দিয়ে আসলে কী হয়?
আমাদের দেশে কিছু কর্মকর্তা আছেন, যাদের সুন্দর অফিস আছে, কারো দামী গাড়ি আছে। এদের কেউ ধার্মিক, কেউ দাম্ভিক, কেউ নিশ্চুপ। এরা অফিসে যান নিতান্তই রুটিন ওয়ার্ক করতে, আর মাসশেষে বেতনটা পকেটে পুরতে। নিজের অধীনস্থ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এরা কিছু বলেন না। অধীনস্থদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বাড়তি অর্থের ভাগ পেলে স্মিতহাস্যে পকেটে পুরে বলেন, যা-ই করেন সীমা লঙ্ঘন করে করবেন না। নিজেই অফিসে যান দেরিতে, সেজন্যে অধীনস্থ কেউ দেরিতে আসলে কিছু বলেন না কিংবা বলার সাহস পান না। এ জাতীয় কর্মকর্তাকে কারো দুর্নীতি তদন্তের জন্যে দায়িত্ব দিলে তিনি দুর্নীতিবাজদের সাথে আপসকামিতায় যান এবং বলেন, দেখেন, মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। আপনার যেসব অনিয়ম হয়েছে তা মিথ্যা প্রমাণের জন্যে এই এই করণীয় আছে, আপনি যথাসম্ভব সেটি করবেন। আমি তদন্তে যাবো ঠিকই, কড়া কথা বলবো অবশ্যই, আপনি ভড়কাবেন না। রিপোর্ট দেয়ার সময় আপনার অনুকূলেই দেবো, সেজন্যে কী করতে হবে সেটা যেভাবে হোক জেনে নিয়েন।
|আরো খবর
কোনো তদন্ত কিংবা কোনো অনিয়মের বিষয়ে এমন কর্মকর্তাদের কেউ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলে সাধারণত বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। অথবা বলেন, আপনার সাথে আমি/আমার লোক দেখা করবে। নয়তো বলেন, আরে ভাই! এটা তো ছোটখাট অনিয়ম, আরো কতো বড় অনিয়ম হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে কি লিখতে পারেন না? আবার কেউ কেউ রসিকতা করে বলেন, ওরা চাকুরি করে বেতন পায়, আর কাজ করে ঘুষ খায়! আপনারা একটু এড়িয়ে গেলে কী হয়?
এমন কর্মকর্তাদের অধিকাংশ যোগ্যতার বিচারে নয়, বরং তদবিরের জোরে পদোন্নতি বা পছন্দের পোস্টিং বাগিয়ে নেন। একবার চেয়ারে বসতে পারলেই হলো, সেই চেয়ার টেকসই/নিরাপদ করার জন্যে ঊর্ধ্বতন বস্দের ম্যানেজ করতে যা যা করণীয় তার সবটুকুন সম্পাদনে তিনি পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেন। এমন কর্মকর্তা সম্পর্কে উক্ত বস্রা অন্য এলাকার কর্মকর্তাদের দেখা পেলে বলেন, তুমি/তোমরা কি তার মতো হতে পারো না?
এমন কর্মকর্তাদের অনেকে বক ধার্মিক সেজে ভালোমানুষি প্রদর্শন করেন। ধর্মীয় বিষয়ে আবেগ দেখাতে গিয়ে কর্মস্থলে অনিয়ম হয়ে গেলে বলেন, সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই ক্ষমা করবেন। এরা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা হলে তো কথাই নেই, স্থানীয় সকল ধরনের প্রভাবশালীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন কিংবা অনুকম্পা পাবার প্রয়াস চালান। এরা গভীরভাবে বিশ্বাস করেন, যোগ্যতায় নয়, তদবিরেই ফিরে তকদির। এরা দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যখন যেমন তখন তেমন থাকার চেষ্টা করেন এবং পরিবর্তনটা আগাম আঁচ করতে পারলে মানিব্যাগ হাল্কা করতেও কসুর করেন না।
এমন কর্মকর্তাদের অনেকেই কোনো অনুষ্ঠানে গেলে বক্তৃতা এড়ানোর চেষ্টা করেন, মঞ্চে না গিয়ে শ্রোতাণ্ডদর্শক হয়ে থাকতেই পছন্দ করেন বা নিরাপদ মনে করেন। তাদের মনের কথা হচ্ছে, বোবার শত্রু নাই; উচিত কথার ভাত নাই; তাই চুপ থাকাই উত্তম।
এমন কর্মকর্তাদের বাংলা প্রবাদ অনুযায়ী বলতে হয়, নামের খসম আজিজ মিসির। এদের খুঁজে বের করা কঠিন কাজ নয়। কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্টের পেছনে ঘোরার কিংবা অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। যে কোনো জেলার জেলা প্রশাসক কিংবা তাঁর অধীনস্থরা খুব সহজেই নিরিবিলি মার্কা এমন কর্মকর্তা নির্ণয় করতে পারেন। এমন কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা বা পারফরমেন্সের টার্গেট একজন জেলা প্রশাসক নির্ধারণ করে দেয়া/না দেয়ার চেয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিমত ব্যক্ত করে জেলা প্রশাসক চিঠি লিখতে পারেন। এতে কমণ্ডবেশি ধাক্কা খান তারা এবং নড়েচড়ে বসে নিজেদের বদলানোর চেষ্টা করেন। এ সংক্রান্ত দৃষ্টান্ত কিন্তু আছে।