প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
সড়ক সংস্কারে অনিয়ম বন্ধ করুন
আমাদের দেশে সড়ক সংস্কার/পুনঃনির্মাণে অনিয়ম ও অপচয়ের বিষয়টি প্রায়শই গণমাধ্যমে উঠে আসে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন গ্রামীণ সড়কগুলোর সংস্কার/পুনঃনির্মাণের জন্যে সওজ-এর সড়কগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম বরাদ্দ থাকায় উক্ত সড়কগুলো কম টেকসই হয়ে থাকে। এলজিইডির কিছু সড়ক সংস্কার/পুনঃনির্মাণে কাজ এতোটা নিম্নমানের হয় যে, ঠিকাদার ভেজাল বিটুমিনে কিংবা অন্যান্য অনিয়মে কার্পেটিং/ঢালাই দেয়ার পরপর কিংবা কিছুদিনের মধ্যে সে কার্পেটিং/ঢালাই উঠে যায়। এজন্যে প্রতিবাদী লোকজন উচ্চকণ্ঠ হয়েও যখন প্রতিকার পায় না, গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয় না, তখন বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে এলজিইডি কর্তৃক সড়ক সংস্কার/পুনঃনির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারের অনিয়ম। যেটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। সড়ক ও জনপথ (সওজ)-এর মাধ্যমে সড়ক সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের খুব বেশি অনিয়মের আশ্রয় নিতে হয় না, কেননা আর্থিক বরাদ্দ থাকে পর্যাপ্ত। তারপরও লোভী কিছু ঠিকাদার সওজ-এর প্রকৌশলী/কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে থাকে। যার পরিণতিতে জেলা/উপজেলা সংযোগ সড়ক তো বটেই, আঞ্চলিক মহাসড়কও টেকসই হয় না। বছর না গড়াতেই সড়কে দেখা যায় গর্ত, স্থানে স্থানে পিচঢালাই উঠে গিয়ে অমসৃণ অবস্থা ইত্যাদি। এজন্যে পর্যবেক্ষকরা সড়ক ও জনপথ (সওজ)-এর যারা ঠিকাদারের কাজ তদারকি করার কথা, তাদের গাফলতি ও অর্থপূর্ণ উদাসীনতাকে দায়ী করে থাকেন।
|আরো খবর
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে আশির দশকে যে পুনঃনির্মাণ কাজ হয়েছে, সে কাজের মান এতোটাই ভালো হয়েছে যে, ২-৩টি বন্যা মোকাবেলা করেও সড়কটির উল্লেখযোগ্য অংশে অদ্যাবধি বড় ধরনের মেরামত কাজ করতে হয় নি। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ সড়কটিতে যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে, তার মান নিয়ে কমণ্ডবেশি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে কচুয়া-কালিয়াপাড়া সড়কের সংস্কার কাজ নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠে উক্ত কাজের অনিয়ম সম্পর্কে শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ সংবাদ থেকে জানা যায়, ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কচুয়া-কালিয়াপাড়া সড়ক সংস্কারে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেটে মেসার্স রানা বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সিডিউল অনুযায়ী কার্পেটিংয়ের ঘনত্ব ৪০ মিলিমিটার দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ২৬ থেকে ৩০ মিলিমিটার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ সড়কটির কিছু অংশে বালুর ওপর আবার কিছু অংশে মাটির ওপর কার্পেটিং করা হচ্ছে। আবার কিছু অংশে কার্পেটিং না করে সেই অংশটিকে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিচ্ছে। সড়কটির উঁচু-নিচু অংশগুলো কার্পেটিং দিয়ে মিলিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো রকমে সংস্কার কাজ করে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ, সড়কটির সংস্কার কাজে সওজ-এর কোনো কর্মকর্তাকে নিয়মিত তদারকিতে দেখা যায় যায়নি। তবে মাঝে মাঝে দায়সারা তদারকি করেন। এ অভিযোগ অস্বীকার করে সওজ, চাঁদপুর-এর পক্ষে বলা হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সকে সমাধান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যারা আগামী তিন বছর সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণেরও কাজ করবে।
আমরা শুধু কচুয়া-কালিয়াপাড়া সড়ক নয়, দেশের সর্বত্র এলজিইডি ও সওজ-এর মাধ্যমে সংস্কারের আওতাভুক্ত সড়ক সমূহে ঠিকাদারের কাজের মান নিয়মিত তদারকি করতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার প্রতি জোর অনুরোধ করছি। দায়সারা তদারকিতে, কেবল কাগজ-কলমের প্রমাণসাপেক্ষ তদারকিতে কিংবা নামকাওয়াস্তে লোক দেখানো তদারকিতে প্রকৃত কাজ হয় না। এর ফলে সড়কের সংস্কার/মেরামত/পুনঃনির্মাণ টেকসই হয় না। এ ব্যাপারে যোগাযোগমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।