প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি জাকির হোসাইন খান (৫৮) গত ৫ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। তিনি অন্তত দু মাস অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এ সময় তাঁকে কুমিল্লা ও ঢাকায় চিকিৎসা করানো হয়। এক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁর লিভার সিরোসিস হয়েছে বলে জানান। কিন্তু তাঁকে আর্থিক সমার্থ্যরে অভাবে, সময়ের অভাবে অথবা অন্য কোনো কারণে যথাযথ চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। যদি সম্ভব হতো, তাহলে তিনি রোগ শনাক্তের পর স্বল্প সময়ে মৃত্যুবরণ করতেন না। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলেসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। নব্বইর দশকে সাংবাদিকতায় জড়িত হওয়া এ প্রবীণ সাংবাদিকের নিজ এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি গড়ে উঠে। সেজন্যে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো শাহরাস্তি উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মৃত্যুতে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এবং শাহরাস্তি প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেন, শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান ও মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। পরদিন ৬ এপ্রিল বুধবার সকাল ৯টায় টামটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা শেষে তাঁকে টামটা খান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জাকির হোসাইন খান সাংবাদিকতা করতেন জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে নিতান্তই নেশাবশত। তিনি গ্রামীণ পর্যায়ের সাংবাদিক হওয়ায় সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ তাঁর ছিলো না। সেজন্যে স্বাভাবিকভাবে সাংসারিক জীবন পরিচালনার বাইরে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হতে পারেন নি। সহকর্মী সাংবাদিকরা জানান, জাকির হোসাইন খানের জন্ডিস হয়েছিলো। এ রোগের চিকিৎসা যথাসময়ে যথাযথভাবে না হওয়ায় তাঁকে সম্ভবত লিভার সিরোসিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় শাহরাস্তি প্রেসক্লাব তাৎক্ষণিকভাবে সন্তোষজনক আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসতে না পারলেও সরকারের সমাজসেবা বিভাগের পক্ষ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং সরকারের সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২-৩ লক্ষ টাকা প্রাপ্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারতো। কিন্তু প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ সে সুযোগটুকু পান নি। তাই মরণোত্তর সাংবাদিক জাকির হোসাইন খানের পরিবারের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায় সে বিষয়টি ভেবে দেখা জরুরি বলে আমরা মনে করি।
তিক্ত হলেও সত্যে, সাংবাদিকদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক অনৈতিকতার আশ্রয়ে বিপথগামী হয়ে প্রচুর অবৈধ রোজগার করলেও অন্তত ৯৮ ভাগ এমন রোজগারের বাইরে। জনকল্যাণ সাধন তথা সমাজসেবা করা এবং সম্মান প্রাপ্তির লক্ষ্যে গ্রামীণ পর্যায়ে কমণ্ডবেশি শিক্ষিত লোকজন সাংবাদিকতায় আসেন নেশার বশবর্তী হয়ে। এঁরা জটিল রোগে আক্রান্ত হলে অর্থাভাবহেতু রোগ লুকিয়ে রাখেন, চিকিৎসায় অবহেলা করেন কিংবা বিলম্ব করেন। এর ফলে এঁদের পরিণতি হয় শাহরাস্তির প্রবীণ সাংবাদিক জাকির হোসাইন খানের মতোই। এঁদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে অনেকেই ভাবেন না, কেবল মরে গেলে কেউ কেউ শোক প্রকাশ করেন। এটা যথেষ্ট নয়। এজন্যে প্রতিটি প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনে ‘সাংবাদিক কল্যাণ তহবিল’ গঠন জরুরি। চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এমনটি আছে। সকল স্থানের সাংবাদিক সংগঠনের উদ্যোগে এমন তহবিল গঠনের জন্যে আমরা সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।