প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর লঞ্চঘাটের কর্মকর্তারা কতোটা দায়িত্বপরায়ণ?
চাঁদপুর নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ চাঁদপুর জেলার ২০৩ কিলোমিটারসহ মোট ৬৭৫ কিলোমিটার নৌপথের নিয়ন্ত্রণ ও নাব্যতা রক্ষা করে থাকে। চাঁদপুর নদী বন্দরে রয়েছে পৃথক স্টিমার ও লঞ্চঘাটসহ আরো কিছু পৃথক ঘাট। চাঁদপুর লঞ্চঘাট হতে ও লঞ্চঘাট হয়ে বিভিন্ন নৌপথে যাত্রীবাহী একতলা, দোতলা ও তিনতলা লঞ্চ এবং স্টিমার ঘাট হয়ে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী স্টিমার সমূহ চলাচল করে। এছাড়া অন্যান্য ঘাট হতে পণ্যবাহী কার্গো, বাল্কহেড, ওয়েল ট্যাংকার এবং ছোট-বড় সকল ধরনের নৌযান চলাচল করে। একজন উপ-পরিচালক/বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তার অধীনে প্রয়োজনীয় জনবল দ্বারা চাঁদপুর বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
|আরো খবর
চাঁদপুর নদী বন্দরের কার্যক্রম ব্যাপক। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ক) টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ/ঘাট/পয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ ও উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে বার্ষিক ইজারা প্রদান; খ) নৌপথ খনন, বালি উত্তোলনের অনুমতি/অনাপত্তি প্রদান; গ) নদী বন্দর সীমানায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ; ঘ) নদী বন্দর সীমানা/ফোরশোর ব্যবহারকারীদের নিকট থেকে ল্যান্ডিং এন্ড শিপিং চার্জ আদায়। এ বন্দর বিভাগ ছাড়া চাঁদপুর নদী বন্দরে বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ন্ত্রণাধীন আরো ৪টি বিভাগ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে : ক) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ, খ) নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ, গ) প্রকৗশল বিভাগ ও ঘ) হিসাব বিভাগ।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখ্য তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর লঞ্চঘাটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কথা হলো, সুষ্ঠুভাবে কি পরিচালিত হয়? যদি হয়ে থাকে, তাহলে অনুমোদিত যাত্রী সংখ্যার চেয়ে লঞ্চগুলো দিনে ও রাতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের সুযোগ পায় কীভাবে? গত ১৯ মার্চ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় ৩৪৫ জন অনুমোদিত যাত্রীর বিপরীতে ১৬শ’ যাত্রী নিয়ে এমভি ইমাম হাসানের ঢাকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ছেড়ে যাবার ঘটনাসহ পূর্বের আরো কিছু ঘটনায় মোটেও মনে হয় না যে, চাঁদপুর লঞ্চঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুরোপুরি দায়িত্বপরায়ণ।
ধারণ ক্ষমতার প্রায় চার গুণ যাত্রী নিয়ে এমভি ইমাম হাসান চাঁদপুর লঞ্চঘাট ছাড়ার পর দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় লঞ্চ চালকের ওপর চড়াও হয় যাত্রীরা। এমতাবস্থায় চালক লঞ্চটিকে পুনরায় ঘাটে তথা টার্মিনালে ভিড়াতে বাধ্য হয়। তারপর এ সকল যাত্রীকে অন্য দুটি লঞ্চযোগে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিকল্প লঞ্চে যাত্রীদের পাঠানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) যথাযথ দায়িত্বপালন করে। অথচ গণমাধ্যমের কাছে মিথ্যাচার করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে আমরা লঞ্চটিকে যেতে দেইনি। তিনি না যাত্রীরা যেতে দেয়নি সেটা খোলসা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাস্তবতা হলো এই যে, চাঁদপুর লঞ্চঘাটে বিভিন্ন যাত্রীবাহী লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের বিষয়টিকে বিআইডব্লিউটিএ’র টিআইসহ অন্যরা দেখেও না দেখার ভান করে। এই ভান করার জন্যে তারা যে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দ্বারা কোনো না কোনোভাবে লাভবান হন না, সেটা উঁচু গলায় কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেটি মনিটরিং করছে বলে মনে হয় না। তবে ১৬০০ যাত্রী নিয়ে যদি এমভি ইমাম হাসান শনিবার মেঘনায় ডুবে যেতো, তাহলে হয় তো বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টনক নড়তো, টিআইসিহ অন্যরা কম-বেশি শাস্তির মুখোমুখি হতো। কিন্তু অনেক মূল্যবান জীবন তো আর ফিরে পাওয়া যেতো না। ভাগ্যিস, আল্লাহ রক্ষা করেছে। কিন্তু দায়িত্বশীলরা দায়িত্বপরায়ণ না হলে এ রক্ষা মিলবে কতোদিন-সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।