প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২২, ০০:০০
গত শনিবার (১২ মার্চ ২০২২) ছিলো হাজীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকায় অবস্থিত প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলাখাল জে. এন. উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজের ৯২ বছরের ইতিহাসে একটি অনন্য দিন। ১৯৩০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ওইদিন এই প্রথম প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেটি আবার সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নয়, মাত্র একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে হয়েছে এই পুনর্মিলনী। এই পুনর্মিলনীর আয়োজক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয়, এটির আয়োজক হচ্ছে ১৯৯১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যাচ। সেজন্যে তারা অতিথি নির্বাচন থেকে শুরু করে সব কিছুতেই স্বাধীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। তারা এ বিদ্যালয়ের সোনালী অধ্যায় (১৯৭৯-২০০৩)-এর প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোঃ শাহজাহান আলীকে প্রধান অতিথি করার ব্যাপারে ছিলো নিরাপোষ ও অনড়। সেজন্যে কাজী মোঃ শাহজাহান আলীর সুস্থতা-অসুস্থতা, সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে পুনর্মিলীর তারিখ কয়েক দফা পরিবর্তন করেছে। সেমতে তারা শুধু তাঁকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত করায়নি, তাঁর সহকর্মী অর্থাৎ তাদের সকল জীবিত প্রাক্তন শিক্ষককে সংবর্ধনা প্রদানের উদ্দেশ্যে উপস্থিত করিয়েছে।
বলাখালের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খোদেজা আক্তার ১৯৯১ ব্যাচের এই পুনর্মিলনী আয়োজনে তাঁর সকল সহকর্মীকে নিয়ে শুধু সহযোগিতার অকৃপণ হাতটি বাড়িয়ে দেননি, নিজের উদার মানসিকতারও ব্যতিক্রম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তিনি এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান হওয়া, স্বাগত ভাষণ দেয়া কিংবা মঞ্চের প্রথম সারিতে বসার কথা। কিন্তু না, তিনি এ রীতির অনুকূলে নিজের সুদৃঢ় অবস্থান নেন নি। এর ফলে পুনর্মিলনী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক সভাপ্রধান হওয়া ও তাদের পক্ষ থেকে একজন স্বাগত ভাষণ দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। উপর্যুপরি তিনি তাঁর সাবেক সহকর্মী ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি হবার কারণে প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত শিক্ষকদেরকে মঞ্চের সম্মুখ সারিতে বসার সুযোগ দিয়ে নিজে দ্বিতীয় সারিতে বসেছেন এবং বর্তমানে তাঁর সহকর্মী হিসেবে কর্মরত সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে অনুষ্ঠানের পুরো অংশ জুড়ে উপস্থিত রেখেছেন।
বলাখালের এই প্রতিষ্ঠান প্রধানের ঔদার্য ও সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণে ১৯৯১ ব্যাচের পুনর্মিলনীটি বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন, র্যালিতে নেতৃত্ব দেয়া এবং আলোচনা ও সংবর্ধনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ তাদের পরম শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক কাজী মোঃ শাহজাহান আলী এককভাবেই উপভোগ করেছেন। বর্তমানে চাঁদপুর জেলার শীর্ষস্থানীয় বিদ্যালয় হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৭ ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সম্প্রতি একটি পুনর্মিলনী আয়োজন করে, যেখানে তারা সাবেক প্রধান শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকগণকে আমন্ত্রণ জানালেও প্রধান অতিথি করেছে বাইরে থেকে, আর শিক্ষকদের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা পর্বটিও তারা রাখেনি। কিন্তু বলাখাল জে. এন. উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯১ ব্যাচ সব কিছুতে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষকদেরকে প্রধ্যান্য দিয়ে বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম যে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এবং নির্বিঘেœ অনুষ্ঠান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে স্বাধীনতা উপভোগ করেছে, এটি শুধু ব্যতিক্রম নয় বিরল। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মঞ্চকে ভারাক্রান্ত না করেও যে নিজেদের সামর্থ্যে একটি অনুষ্ঠানকে সফল করা যায়, সেটি মানুষকে দেখিয়েছে। বাস্তবতা হলো, এমন দেখানোটা আমাদের দেশে সকল কালে সব স্থানে নিরাপদ নয়, কম-বেশি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। যেহেতু কোনোরূপ ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই বলাখাল জে. এন. উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯১ ব্যাচের পুনর্মিলনী সুন্দর ও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, সেহেতু আয়োজকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।