প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূরুল ইসলাম। তাঁর মতো অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেটা পাচ্ছেন না। তিনি গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডস্থ গোবিন্দপুর গ্রামের মহাজন বাড়ির বাসিন্দা। তিনি বলেন, এক সময় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও ২০১২ সালের পর থেকে আমার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। আমার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল কাগজপত্র রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত সাময়িক সনদ (যার সিরিয়াল নং ম-১০৫৫৪০) এবং ফরিদগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সিরিয়াল নাম্বার ০২০৫০৫০৬৩৭। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনে ১৫৮নং সিরিয়ালে আমার নাম লিপিবদ্ধ হয়। আমার নামে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার বই নং ৫০৪। আমি টানা ৮ বছর ভাতা পেয়েছি। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সোনালী ব্যাংক (হিসাব নং ২০৩৬৩) থেকে সর্বশেষ ভাতা উত্তোলন করি। তিনি বলেন, আজ আমি অবহেলিত। হার্টের সমস্যা, মুখ দিয়ে রক্ত পড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার ৪ পুত্র ও ১নং কন্যা সন্তানও আমার খোঁজ-খবর রাখে না।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও চলতি দায়িত্ব পালনকারী সহিদ উল্লা তপাদার জানান, মোঃ নূরুল ইসলামসহ অনেকের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া এই বিষয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। আশা করছি, মামলা নিষ্পত্তি হলে এবং পুনরায় ভাতা চালু হলে তিনিসহ সকলেই অন্যান্য সকল সুবিধা পাবেন।
সত্যি কথা বলতে কি, ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে মোঃ নূরুল ইসলামসহ অন্য সকলে বহুল কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া অন্য কোনো প্রাপ্তির আশায় অংশগ্রহণ করেন নি। স্বাধীনতার পর সরকার দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দিতে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসহ দাফন ও জীবদ্দশায় মাসিক ভাতা প্রদানের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সরকার সর্বশেষ ১২ হাজার টাকা থেকে সম্মানী আরো ৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করেছেন। মাসিক এই ভাতা ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে উৎসব ভাতা, কম খরচে চিকিৎসা সুবিধাসহ বহু রকমের সুবিধা রয়েছে।
এমতাবস্থায় অসুস্থ ও চিকিৎসা প্রত্যাশী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূরুল ইসলামের মাসিক ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা না পাওয়া যেনো রোগের কষ্টের চেয়েও বেশি কষ্টকর। একটি মামলার কারণে তাঁর এই সাময়িক বঞ্চনা। মামলার রায় বা নিষ্পত্তি হলে নিশ্চয়ই তিনি ন্যায্য সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। তার পূর্বে তাঁর পাশে স্থানীয় প্রশাসনসহ যে কোনো দরদী মানুষের দাঁড়ানো উচিত, যাতে তিনি অন্তত চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। এ ব্যাপারে আমাদের অনুরোধ থাকলো নিরন্তর।