প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে ২-১ জন নির্বাচিত মেম্বার থাকেন, যারা নিজেরা অপকর্ম করেন, অন্যকে অপকর্ম করতে সহায়তা করেন এবং চিহ্নিত অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন। এদের কেউ কেউ ‘সর্প হইয়া দংশন করে এবং ওঝা হইয়া ঝাড়ে’-এমন অভিনয়ও করেন। এরা সালিসের নামে যা করেন, তাতে শিহরিত ও বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এরা ‘বিবি তালাকের ফতোয়া’ যেমন খোঁজেন, তেমনি ‘হিল্লা বিয়ে’তে প্রণোদনা দেন। এরা পরকীয়ায় নাক গলান, নিজেও তাতে জড়িয়ে যান। নিজ এলাকার উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের কাছে চাঁদা চান, নয়তো নানাভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছোটখাট উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ আত্মসাতের চেষ্টা করেন। কোনো কোনো ইউপি মেম্বার অপকর্ম করতে করতে এক সময় এমন গডফাদার সেজে যান, যাকে স্বয়ং চেয়ারম্যান সমীহ করতে বাধ্য হন। এমন ইউপি মেম্বারদের সাথে পোশাকধারী বাহিনীর হট কানেকশন থাকে, যে কারণে তারা ধরাকে সরাজ্ঞান করেন।
গত ২ মার্চ এক ইউপি মেম্বারের কা- দেখে সাধারণ মানুষ তো বটেই, স্বয়ং পুলিশকে বিস্মিত ও বিক্ষুব্ধ হতে হয়েছে। ওই দিন রাতে চাঁদপুর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই লোকমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ছিদ্দিক প্রধানিয়া নামে এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে নিয়ে চাঁদপুর মডেল থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে তরপুরচ-ী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইয়াছিন বেপারী তার লোকজনকে নিয়ে উক্ত আসামীকে ছিনতাই করে নিয়ে যান। তৎক্ষণিক ঘটনাটি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশিদের নির্দেশে ইউপি মেম্বার ইয়াছিন বেপারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তারপর ছিনতাই হওয়া আসামীকে আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় কৌশলে থানায় এনে হাজির করা হয়। এমতাবস্থায় তরপুরচ-ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন রাসেল গাজীর উপস্থিতিতে তার জিম্মায় শর্তসাপেক্ষে আটক মেম্বার ইয়াছিন বেপারীকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ছিদ্দিক প্রধানীয়াকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
তরপুরচ-ী ইউনিয়নের অবস্থান চাঁদপুর শহরতলীতে, এমন কোনো প্রত্যন্ত এলাকায় নয়, যেখানে পুলিশসহ অন্য কাউকে দ্রুত পৌঁছাতে অনেক বেগ পেতে হয়। তারপরও ইউপি মেম্বার ইয়াছিন বেপারী পুলিশের হাত থেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ছিনতাইয়ের সাহস দেখিয়েছেন এবং ছিনতাইকৃত আসামীকে থানায় হাজির করিয়ে নিজে ছাড়া পেয়েছেন। আমাদের মতে, গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে ছিনতাইয়ের ঘটনা অনেক বড় অপরাধ। এজন্যে উক্ত মেম্বারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা হওয়া দরকার। অন্যথায় এই মেম্বার ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের অপরাধ করার সাহস খুঁজে পাবে।
আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, ইউপি মেম্বারদেরকে তাদের আচরণ বিধি ও সুশাসন সম্পর্কে ট্রেনিং দেয়া দরকার এবং বিধি লঙ্ঘন করলে ও সুশাসনে ঔদাসীন্য প্রদর্শন করলে তাদেরকে সাময়িক কিংবা চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের নিয়ম রাখা জরুরি। মেম্বারদেরকে তাদের সীমাবদ্ধতা এবং সীমালঙ্ঘন সম্পর্কেও ধারণা দেয়া দরকার। এ ব্যাপারে প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা বা অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারেন।