প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২২, ০০:০০
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সমালোচনা ও বিরুদ্ধে লেখা প্রসঙ্গে
গণমাধ্যম হচ্ছে জনসাধারণের কাছে সংবাদাদি পৌঁছানোর মাধ্যম। যেমন : সংবাদপত্র (মুদ্রিত ও অনলাইন), টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি। গণমাধ্যমের সর্বাত্মক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের প্রয়োজনে স্বাধীনতা ভোগ করা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। কিন্তু এ স্বাধীনতা বিশে^র সকল দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেই। একেক দেশে, একেক রকম। প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস্ (আরএসএফ) কর্তৃক সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রকাশিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম বলে জানা গেছে। এ সূচকের সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ নরওয়ে। আর বাংলাদেশের নিকটবর্তী দেশ ভারতের অবস্থান ১৪২, শ্রীলঙ্কার ১২৭, নেপালের ১০৬, ভুটানের ৬৫ ও মালদ্বীপের ৭৯। এ সূচকে লাগাতার সর্বনি¤œ অবস্থানে থাকছে চীন, উত্তর কোরিয়াসহ স্বল্প ক’টি দেশ। আমাদের আত্মশ্লাঘার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ দুর্নীতির সূচকের তুলনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে একেবারে তলানিতে নেই।
|আরো খবর
জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেকের মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে; এই অধিকারে হস্তক্ষেপ ছাড়াই মতামত রাখা এবং কোনো গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য ও ধারণাগুলো অনুসন্ধান করা, গ্রহণ এবং গ্রহণের স্বাধীনতার সীমানা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো জাতীয় পর্যায়ে কম-বেশি স্বাধীনতা ভোগ করলেও স্থানীয় পর্যায়ে সেটি একেবারে সীমিত পর্যায়ে ভোগ করছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠভাবে কিছু লেখা বা প্রকাশ করা তো দূরের কথা, তাদের কাজের সমালোচনা করাও ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের প্রত্যাশা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের গণমাধ্যমগুলোতে শুধু তাদের দৈনন্দিন কর্মকা-ের সংবাদ ও তাদের স্তুতি প্রকাশিত হোক, এর বাইরে অন্য কিছু নয়। অবস্থা এমন, স্থানীয় রাজনীতিক ও সাংসদের কাজের সমালোচনা, এমনকি তার বিরুদ্ধে কিছু লিখে বা প্রকাশ করেও পার পাওয়া যায়, কিন্তু জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের উক্ত কর্মকর্তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করেও পার পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে তাদের কারো কারো যুক্তি হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তার কর্মকা-ের সমালোচনা মানেই সরকার বা তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে লিখা বা বলা তথা বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার সামিল। এজন্যে কোনো কোনো কর্মকর্তা তার ক্ষমতার আলোকে নানারূপী নিগ্রহের শিকারে পরিণত করতে থাকে তার টার্গেটকৃত গণমাধ্যম ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে।
এভাবে সীমিত স্বাধীনতা ও নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েই চলছে স্থানীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমগুলো। কোনো কোনোটি কারো ক্রীড়নকে ও মুখপাত্রে পরিণত হয়, কোনো কোনোটি নিগ্রহ ও রোষ নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। আবার কোনো কোনোটি সাংবাদিকতার নীতিমালা বিসর্জন দিয়ে যখন যেমন তখন তেমন নীতিতে পরিচালিত হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সমালোচনা সহ্য করার ও সত্য মেনে নেয়ার মানসিকতা সকলকে অর্জন করতে হবে। তবেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভোগের পরিমাণ বাড়বে এবং সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনে চলা সহজ হবে।