প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
কল্যাণার্থে পুনর্মিলনী-সংস্কৃতি টেকসই হোক
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অন্য উল্লেখযোগ্য অনেক কিছুই বন্ধ নেই। ওয়াজ মাহফিল, সমাবেশ, বিয়ে, পুনর্মিলনী, পর্যটন কেন্দ্রের কার্যক্রম নির্দিষ্ট বিধি-নিষেধের আওতায় থেকেও প্রায় স্বাভাবিকভাবে চলছে। এক্ষেত্রে যেভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি দরকার, সেভাবে তা গ্রহণযোগ্য-অগ্রহণযোগ্য কারণে হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানা সত্ত্বেও করোনা সংক্রমণ সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে নি¤œমুখী এবং সেজন্যে মানুষের মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঢিলেঢালা ভাব। সামর্থ্যবান শিক্ষকরা করোনা-ছুটি পেয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলো আনন্দে মুখরিত করে তুলছে এবং দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলো দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে হতাশায় মুষড়ে পড়ছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারী অদ্যাবধি মানুষের অবাধ চলাচল ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করায় সামর্থ্যবান মানুষগুলো বিনোদন-পিপাসায় ভুগছে। তৃষ্ণার্ত এ মানুষগুলো ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে দেশ-বিদেশের পর্যটন কেন্দ্রে এবং আনন্দ-উন্মাদনায় মত্ত হচ্ছে। যারা অসামর্থ্য, তাদের কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছে কিংবা নিকটবর্তী স্থানে ঘুরেফিরে বিনোদন আহরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে, পুনর্মিলনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে কমিউনিটি সেন্টারগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ায় খালি পাওয়া মুশকিল। এমন কোনো শুক্রবার নেই যেদিন জেলা/উপজেলা শহরে কোনো না কোনো উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান না হচ্ছে।
|আরো খবর
গত শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২) চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাই স্কুল প্রাঙ্গণে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ১৯৯৭ ব্যাচ তাদের পাস করার পর পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে রজতজয়ন্তী উদ্যাপন করেছে। তাদের এ উদ্যাপন ছিলো গতানুগতিকতার বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকের। তারা মৃত বন্ধুদের স্মরণ করেছে, শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেছে, কৈশোরের স্কুল জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক চর্চা করে নস্টালজিক হয়েছে, স্মৃতিচারণ করেছে, সংগীত-কৌতুকে নিজেদেরকে উজ্জীবত করার চেষ্টা করেছে। পুরো উদ্যাপনে ছিলো শৃঙ্খলা ও মাত্রাজ্ঞান। লক্ষ্য করা যায়নি মাত্রাতিরিক্ত কিছু। এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান উক্ত আয়োজনে অংশ নেয়ায় এটি পায় ভিন্ন মাত্রা।
একই দিন (শুক্রবার) চাঁদপুর জেলা ও বিভিন্ন এলাকার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ১৯৯৪ ব্যাচ চাঁদপুর স্টেডিয়ামে সপরিবারে আয়োজন করে পিকনিক। দিনব্যাপী আনন্দ-আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকলে ছিলো ব্যস্ত। শেষ বিকেলে স্থানীয় সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি উক্ত পিকনিকে অংশ নেয়ায় আয়োজকরা খুঁজে পায় আশাব্যঞ্জক আনন্দ ও পরিপূর্ণ সার্থকতা।
দু বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ১৯৯২ ব্যাচ চাঁদপুর স্টেডিয়ামে সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি পুনর্মিলনীর যে মেগা আয়োজন করে, সেটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ আয়োজন বলে বিবেচিত। তারপর সাম্প্রতিক সময়ে ১৯৮৬ ও ৮৮ ব্যাচ নানামুখী কার্যক্রমে চাঁদপুরকে সরগরম করে রেখেছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাচও একের পর এক পুনর্মিলনী করে চলছে। চাঁদপুরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চলমান এই পুনর্মিলনী-সংস্কৃতিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। এর মধ্য দিয়ে সহপাঠী ও ইয়ার মেটদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। সম্পাদিত হচ্ছে কিছু কল্যাণকর এবং আনন্দ-বিনোদনমূলক কার্যক্রম। এক্ষেত্রে কল্যাণকর কার্যক্রমকে ছাপিয়ে আনন্দ-ফুর্তি ও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা যেনো বেশি হয়ে না যায়, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখতে হবে এবং সেটি করলেই পুনর্মিলনী-সংস্কৃতি হবে টেকসই-এটি আমাদের সাধারণ অভিমত। বিশেষ অভিমত ও চুলচেরা বিশ্লেষণে নেতিবাচকতার গন্ধ থাকলে আয়োজকরা নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে আমরা আপাতত সেদিকে না হয় না-ইবা গেলাম।