প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
যেখানে ডাকাতিয়াকে একটু ঠেকানো দরকার
আন্তর্জাতিক নদীর স্বীকৃতি না থাকলেও ডাকাতিয়া নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগমারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কুমিল্লার লাকসাম হয়ে নদীটি চাঁদপুরে প্রবেশ করে শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে এক সময় লক্ষ্মীপুরের হাজীমারা দিয়ে প্রধান ধারায় প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিশেছে। পরবর্তীতে নানুপুর থেকে চাঁদপুর বড় স্টেশন পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের ব্যাপক খনন প্রক্রিয়ায় ডাকাতিয়া পরিবর্তিত প্রধান ধারায় চাঁদপুর শহরকে দ্বিখ-িত করে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। বিভিন্ন ধারা মিলিয়ে ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য ২০৭ কিলোমিটার।
|আরো খবর
ডাকাতিয়া নদীটি চাঁদপুর সদরের নানুপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে যে ধারায় ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রবেশ করে লক্ষ্মীপুর জেলার হাজীমারা পর্যন্ত গিয়েছে, সে ধারাকে বেষ্টিত করে এবং মেঘনা নদীর পূর্ব পাড় ঘেঁষে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সিআইপি) নির্মাণ করা হয়েছে। সিআইপির অভ্যন্তরস্থ ডাকাতিয়া নদী এখন আর মোটেও খর¯্রােতা নেই এবং কোনো ভাঙ্গনও নেই। তবে চাঁদপুর বড় স্টেশন থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর অংশটি ব্যাপক নৌযান চলাচলের কারণে তুলনামূলকভাবে খর¯্রােতা। এ অংশটি কোথাও কোথাও ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় অনেকটাই মত্ত। যে সম্পর্কে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘ডাকাতিয়া গিলে খাচ্ছে ফরিদগঞ্জের মানচিত্রের শেষাংশ ॥ জমি বাড়ছে চাঁদপুর সদরে’ শিরোনামের প্রধান শীর্ষ সংবাদ পড়ে খুব ভালোভাবে ধারণা অর্জন করা যায়।
এ সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি এমরান হোসেন লিটন যে ছবি সংযুক্ত করেছেন, তা দেখে ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন-ভয়াবহতা খুব সহজেই আন্দাজ করা যায়। ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ১নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নে যেখানে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানচিত্রের শেষাংশের অবস্থান, সেখানেই বর্তমানে দৃশ্যমান এই ভাঙ্গন-ভয়াবহতা। এখানে ডাকাতিয়া নদী তার উত্তর পাড় তথা চাঁদপুর সদর উপজেলা অংশে ভাঙ্গন-লীলা না চালিয়ে দক্ষিণ পাড়ে তথা ফরিদগঞ্জ উপজেলা অংশে সেটি চালাচ্ছে। এতে ফরিদগঞ্জের মানচিত্র ছোট হলেও চাঁদপুর সদর উপজেলার মানচিত্র বাড়ছে অর্থাৎ চর পড়ছে। কিন্তু সেখানে দখলদারিত্ব পায় না ফরিদগঞ্জের ভাঙ্গনগ্রস্ত লোকজন। প্রতিনিয়ত ট্রলারসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচলের কারণে দক্ষিণ পাড় ভেঙ্গে উত্তর পাড়ে চর জাগছে এবং চাঁদপুর সদরের মানুষ সে চর দখল করছে। এছাড়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে ফরিদগঞ্জ এলাকায় সরকারি রাস্তা নামকাওয়াস্তে বার বার মেরামত করলেও নদী তা গিলে ফেলে। আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার পাশে এলজিইডির ব্রিজটি যে কোনো সময় নদী গিলে ফেলবে, তারপর এ নদীর করাল গ্রাসে পড়বে মাদ্রাসা-মসজিদসহ অনেক কিছুই।
আমরা ফরিদগঞ্জের ১নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদী রামপুর এলাকায় ডাকাতিয়া নদীকে ঠেকানো জরুরি বলে মনে করি। এজন্যে প্রমত্তা মেঘনা-পদ্মাকে ঠেকানোর মতো ব্যয়বহুল পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ প্রাথমিক উদ্যোগ নিয়ে ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন ঠেকানোর সাময়িক চেষ্টার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধে এমপির মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্বারস্থ হতে হবে। এমনটি ছাড়া স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কেউ এগিয়ে এসে এখানে ডাকাতিয়াকে ঠেকাতে পারবে বলে আমরা বিশ^াস করি না।