প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় মৎস্য সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মৎস্যচাষ ও মৎস্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন, মৎস্য চাষী প্রশিক্ষণ, নিবন্ধিত জেলেদের প্রশিক্ষণ ও বিকল্প আয়বর্ধনমূলক কর্মকা-ে উপকরণ সহায়তা ইত্যাদি কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং মেয়াদ রাখা হয়েছে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণেই হয়তো বা এর কার্যক্রম এখনো চলমান বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলাতেই এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় মতলব দক্ষিণ উপজেলার জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ৬০টি ছাগল বিতরণের জন্যে বরাদ্দ আসে। এ ছাগলগুলো ঠিকাদারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। যার প্রতিটির মূল্য ৮ হাজার টাকা। গত ২৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে ১৬ জন জেলের মাঝে দুটি করে মোট ৩২টি ছাগল বিতরণ করা হয়। বিতরণকৃত ছাগলগুলোর মধ্যে মতলব পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের চরমুকুন্দি গ্রামের মিলন সরকারের দুটি, আনোয়ার হোসেন প্রধানের দুটি, আলী আক্তার সরকারের একটি, বোরহান প্রধানের দুটি, জাহাঙ্গীরের দুটি, মোজাম্মেল সরকারের একটি, সাজু মিয়ার দুটি ও জাকির হোসেনের একটিসহ মোট ১৩টি ছাগল কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যায়।
বিতরণকৃত ১৩টি ছাগলের মৃত্যুর বিষয়ে জেলেদের অভিযোগ হচ্ছে, যে ছাগল দেয়া হয়েছে তার বয়স অনেক কম এবং রোগাক্রান্ত। এমন প্রতিটি ছাগলের আনুমানিক বাজার মূল্য তিন হাজার টাকার বেশি হবে না। মায়ের দুধ খাচ্ছিলো এমন ছোট ও দুর্বল ছাগল কিনে এনেই তবে বিতরণ করা হয়েছে। এগুলোকে ঔষধ খাইয়েও বাঁচানো যায়নি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বড় ছাগল দেয়ার জন্যে বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি। ছাগলগুলোর মৃত্যুর খবর মৎস্য কর্মকর্তাকে জানালে তিনি মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলেন এবং পরবর্তীতে ছাগলের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ^াস দেন। সেমতে তার অফিসে জেলেরা গেলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
মতলব দঃ উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় বেশ গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। আট হাজার টাকা বরাদ্দের বিপরীতে কম দামের ছাগল বিতরণ করে ঠিকাদার ও মৎস্য কর্মকর্তা অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলে প্রচার হচ্ছে। এছাড়া এ উপজেলায় বিতরণের জন্যে নির্ধারিত ৬০টি ছাগলের বিপরীতে ৩২টি ছাগল বিতরণ করা হলেও বাকি ছাগল কাদেরকে দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন যাদের ছাগল মারা গেছে, তাদেরকে পরবর্তীতে ছাগল দেয়ার আশ^াস দিয়েছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান উক্ত ছাগলগুলোর মৃত্যুর বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেছেন, ছাগলগুলো রোগাক্রান্ত বা পরিপক্ক হওয়ার আগে মায়ের দুধ ছাড়িয়ে নেয়ায় পুষ্টিহীনতার কারণে মারা যেতে পারে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার এ অভিমতের সাথে জেলেদের অভিযোগের সাযুজ্য ঘটেছে। সেজন্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অথবা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ছাগলগুলোর মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করতে পারেন বলে আমরা মনে করি।