প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
অভূতপূর্ব সাফল্যের দীপ্তিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ
গত বেশ ক’বছর ধরেই চাঁদপুর জেলায় এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার বোর্ডগুলোর পাসের হারের চেয়ে বেশি। গত রোববার প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে পাসের হারে সবচে’ এগিয়ে আছে যশোর (৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ) ও সবচে’ পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম (৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার হচ্ছে ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর চাঁদপুর জেলায় এইচএসসিতে পাসের হার হচ্ছে ৯৮ শতাংশ, আলিম পরীক্ষায় ৯৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, এইচএসসি ভোকেশনালে ৯৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই তিনটিতে চাঁদপুর জেলায় গড় পাসের হার হচ্ছে ৯৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। নিঃসন্দেহে এমন ফলাফল আশাব্যঞ্জক। এই গড় পাসের হারের চেয়েও চাঁদপুর সরকারি কলেজের পাসের হার ৯৯ দশকি ৫৭ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে এই পাসের হার শতভাগই। কেননা এ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউই অনুত্তীর্ণ হয়নি তথা ফেল করেনি।
|আরো খবর
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ৩টি বিভাগে মোট ৪৬২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তন্মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেয় ১৫৬জন, যাদের সকলে পাস করেছে ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৭ জন। মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেয় ১৬৫ জন, যাদের সকলে পাস করেছে ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫০ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অংশ নেয়ার কথা ১৪১ জন, তবে অংশ নেয় ১৩৯ জন এবং অনুপস্থিত থাকে ২জন। অংশগ্রহণকারী সকলে পাস করেছে ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ জন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিত ২জনকে অনুত্তীর্ণ (ফেল) দেখিয়ে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পাসের হার নির্ধারণ করেছে ৯৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সেজন্যে এইচএসসিতে তিনটি শাখায় চাঁদপুর সরকারি কলেজের গড় পাসের হার দাঁড়ায় ৯৯.৫৭ শতাংশ।
২২৩ জন জিপিএ-৫ সহ প্রায় শতভাগ পাস করায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এবার জেলায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ বছর এইচএসসিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ইতিহাসের সবচে’ সেরা ফলাফল অর্জন করেছে। আমি এই সাফল্যের জন্যে আমার প্রিয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। করোনাকালীন দুর্যোগের মধ্যে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই এই ফলাফল আমরা পেয়েছি।
২০২০ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশে করোনার ব্যাপকতা শুরু হলে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো চাঁদপুর সরকারি কলেজও অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সম্মানীয় শিক্ষকবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, অনলাইন ক্লাস চলেছে নিয়মিত। কলেজের পক্ষ থেকে শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে এবং কঠোর মনিটরিং করা হয়েছে। এর ফলে পাঠদানে অখ- সামগ্রিকতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। বস্তুত তারই সুফল হচ্ছে এবারকার এইচএসসি পরীক্ষায় অভূতপূর্ব ফলাফল, যেটিকে ইতোমধ্যে অভিহিত করা হয়েছে ১৯৪৬ সালে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৭৬ বছরে সবচে’ ভালো ফলাফল হিসেবে। আমরা এজন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। চাঁদপুর জেলায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত ও ১৯৮০ সালে প্রথম সরকারি হওয়া কলেজটির এমন ফলাফল বহু পূর্বেই প্রত্যাশা করা হয়েছিলো। কিন্তু সেটি পূরণ হয়নি। অতীতে বার বার এ কলেজের এইচএসসির ফলাফল বেসরকারি অনেক কলেজের চেয়ে খারাপ হতো। কলেজে ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্সকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার ভালো ফলাফল করা সম্ভব হতো না বলে সাবেক অধ্যক্ষগণ দাবি করতেন। কিন্তু করোনার মতো প্রতিকূলতার মধ্যেও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উক্ত দাবিকে সঠিক নয় বলে প্রমাণ করেছেন বর্তমান অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ। চাঁদপুরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠকে জেলার শীর্ষ অবস্থানে নিতে সক্ষম হওয়ায় শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষকে জানাই অপরিসীম কৃতজ্ঞতা ও অশেষ ধন্যবাদ।