প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দলের প্রতি এমন আনুগত্য প্রশংসনীয়
নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষোভে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ও অপ্রীতিকর ঘটনায় লিপ্ত হওয়া, দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কথা বলা, বহিষ্কৃত হওয়া কিংবা দলত্যাগ করা যখন আমাদের দেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক অতি সাধারণ দৃশ্য, তখন এর বিপরীতে কারো কারো দলীয় আনুগত্য প্রদর্শনের অসাধারণ দৃশ্যে রীতিমত থমকে দাঁড়াতে হয়। এমনই একজন হচ্ছেন মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী। তার দলের জেলা পর্যায়ের অতীত ও বর্তমান নেতাদের কেউ কেউ যেখানে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বেসামাল বক্তব্যে আলোচিত-সমালোচিত, সেখানে তিনি তার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় হয়েছেন প্রশংসিত। তিনি হচ্ছেন হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন বাকিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান।
|আরো খবর
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ কামরুজ্জামান টুটুল জনাব মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারীর ফেসবুকে প্রদত্ত একটি পোস্ট হুবহু উদ্ধৃত করে শেষ পৃষ্ঠায় ‘সবসময় ইউনিয়নবাসীর পাশে থাকবো’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। তিনি সংবাদ-সূচনায় লিখেছেন, নিজ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব স্থলাভিষিক্ত নূতন চেয়ারম্যানের নিকট বুঝিয়ে দেয়ার একদিন আগে তিনি তার নিজ ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন। সততা না থাকলে কোনো জনপ্রতিনিধি এমন উন্মুক্ত পোস্ট দেয়ার সাহস রাখেন না বলে স্থানীয়রা বলাবলি করছেন।
তিনি তার পোস্টে তার মেয়াদকালে (১৫-৭-২০১৬ থেকে ০৯-০২-২০২২) ইউনিয়নে সম্পাদিত উন্নয়ন কর্মকা- ও ভালো কাজগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে শেষ দিকে লিখেছেন, গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখের নির্বাচনে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। আমি যেহেতু বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়নে আমার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা রয়েছে, সেহেতু আমি অনেক বেশিই আশাবাদী ছিলাম যে, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবো। কিন্তু আমি মনোনয়ন পেলাম না। মনোনয়ন না পাওয়াতে আমার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা যেমন হতাশ হয়েছেন, তেমনি সাধারণ জনগণও হতাশ হয়েছেন। সাধারণ জনগণ আমাকে চাপ দিতে লাগলেন, আমি যেনো স্বতন্ত্র নির্বাচন করি। তারা আমাকে আশ^স্ত করতে লাগলেন, আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবো। কিন্তু আমি রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারলাম না।.....আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারলাম না। কারণ, আওয়ামী লীগ আমার রক্তে মিশে আছে। ভালো-মন্দ বোঝার বয়স যখন হয়েছে, তখন থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ছায়াতলে রয়েছি।.......জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধাবনত মাথায় মেনে নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্যে কাজ করেছি। আমি যেহেতু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, তাই আমার সকল কমিটিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্যে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। ..........আমার সোজা-সাপটা কথা, আমি কখনো আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাবো না। তিনি তার পোস্টে সর্বশেষ লিখেন, ইউনিয়নবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা যে কোনো সময় যে কোনো সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসবেন। আপনাদের জন্যে আমার দরজা সব সময় খোলা।
এ কথা অকপটে বলা যায় যে, বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এবারকার মনোনয়ন সঠিক ছিলো না। যার ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে রানিং চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে বিদ্রোহী প্রার্থী না হয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীকে সহযোগিতা করাসহ ফেসবুক পোস্টে যে মানসিকতা প্রকাশ করেছেন, তাতে তার প্রতি শত্রু বা প্রতিপক্ষেরও প্রশংসনীয়/ইতিবাচক অভিব্যক্তি প্রকাশের বিকল্প কিছু আছে বলে মনে করি না। তার কাছ থেকে দলের জেলা/উপজেলা পর্যায়ের মনোনয়নবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ ২-৪ জন নেতার শেখার কিছু আছে বলে নির্দ্বিধায় বলা যায়।