প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
শাহরাস্তিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতি উধাও হয়ে গেছে বলে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। চাঁদপুর কণ্ঠের শাহরাস্তি ব্যুরো ইনচার্জ মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল কর্তৃক পরিবেশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, শাহরাস্তি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত শোরশাক বাজারে প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতির যাত্রা শুরু প্রায় ২০ বছর আগে। তবে এটি জেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর। তাদের রেজিস্ট্রেশন নং ১২২/চাঁদ/০৮। শোরশাকের জনৈক মোঃ জসিম উদ্দিনের পরিচালনায় চলতে থাকে এ সমিতির কার্যক্রম। এলাকার নিরীহ সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন প্রলোভনে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে এ সমিতি অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। এরা স্থায়ী আমানত তথা এফডিআরে লাখপ্রতি অধিক মুনাফা দেবার আশ^াস দিয়ে প্রবাসীদের স্ত্রী, প্রবাসফেরৎ লোকজন এবং সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেয়া লোকজনকে টার্গেট করে এদের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহে সক্ষম হয়। বিশ^াসযোগ্যতা অর্জনের জন্যে ক’বছর লাখপ্রতি মাসিক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা মুনাফা তথা সুদ দিয়ে এরা ব্যাপক আকর্ষণ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। এর ফলে তাদের টার্গেটের বাইরের লোকজনও এ সমিতিতে এফডিআর করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এর ফলে যা হবার তা-ই হয়েছে। পরিচালক জসিম উদ্দিন সহ তার সহযোগীরা বিপুল অঙ্কের সঞ্চিত অর্থের লোভ সামলাতে না পেরে নানা অনিয়মের আশ্রয়ে নিজেরা লাভবান হতে থাকে এবং গ্রাহকদের বঞ্চিত করতে থাকে। গত দু বছর যাবৎ তাদের সমিতি তথা প্রান্তিকের কার্যক্রম ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। সর্বশেষ বছরখানেকের মাথায় তারা নিজেদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ করে রাখে। আর সঞ্চয়ীরা তাদের সঞ্চয় ফেরৎ পেতে অনেকটা দিগি¦দিক ছুটোছুটি করছে।
শাহরাস্তি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত সঞ্চয়ীদেরকে তাদের টাকা ফিরে পেতে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কিছু লোকজন কর্তৃক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দায়েরকৃত অভিযোগের কপি পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, প্রায় এক মাস পূর্বে প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে নোটিস প্রেরণ করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। সাবেক এক মহিলা কর্মীর নিকট নোটিস পৌঁছে দিলে তারা লোক মারফত নোটিসের জবাব পাঠায়, তবে কমিটির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু লিখেনি।
আমরা শাহরাস্তি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার উপরোক্ত বক্তব্যকে নিতান্তই দায়সারা বলে মনে করছি। আমাদের জানা মতে, ২০১৩ সাল হতে সারাদেশ থেকে প্রাপ্ত অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগের আলোকে বহুমুখী সমবায় সমিতি নামধারী কোনো সমিতিকে জেলা সমবায় অফিস থেকে আর রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে না। প্রতি অর্থ বছরের শুরু অর্থাৎ জুলাই থেকে পরবর্তী মার্চ পর্যন্ত প্রতিটি সমিতির বার্ষিক অডিট করার দায়িত্ব অর্পিত থাকে নির্দিষ্ট কর্মকর্তার ওপর। কোনো সমিতির এ অডিট করা না গেলে ধরে নিতে হবে যে, সমিতিতে আর্থিক অনিয়ম আছে। যেখানে প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতি দু বছর ধরে ধুঁকছিলো, প্রায় এক বছর পূর্বে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, সেখানে তাদের অডিট কি আদৌ হয়েছিলো? হলেও সেটা কি সন্তোষজনক না আপত্তিতে ভরপুর ছিলো?-এর সুস্পষ্ট জবাব জেলা ও উপজেলা সমবায় বিভাগকেই দিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়টি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার চোখে পড়লো, চারদিকে রটে যাওয়া আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি কি তাদের চোখে পড়েনি? তারা কি রবাহুতও হয়নি? নাকি দেখেও না দেখার ভান করেছে, শুনেও না শোনার ভান করেছে-সেটা সমবায় বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত সরকারের অন্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত বলে আমরা মনে করি।