প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
স্মরণকালে চাঁদপুর জেলার কোনো থানায় কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানা ছিলো না। চাঁদপুরের মানুষ আইনমান্যতার সংস্কৃতিতে বিশ^াসী বলে এমনটি করে না-এটা গর্বের সাথে সকলেই বলে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে এবং রাজনৈতিক কারণে দেশের বিভিন্ন থানা বিভিন্ন সময় আক্রান্ত হয়েছে। তখনও চাঁদপুরের কোনো থানা আক্রান্ত হয়নি। গেলো দশকে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে ও ফরিদগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের গুলিতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায়ও থানায় কোনো হামলা বা আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। সম্প্রতি দুর্গাপূজা চলাকালে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জে মন্দিরে যখন আক্রমণ চলছিলো, তখন পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলো, এর ফলে হয়তো হাজীগঞ্জ থানায় আক্রমণ করা হবে। কিন্তু সে আশঙ্কাও অমূলক বলে মনে হয়েছে।
এমনটি যখন চাঁদপুরের চিত্র, ঠিক তখনই সে চিত্রটি পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করলো কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বিক্ষুব্ধ জনতা নয়-মাত্র ক’জন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। এ নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম হয়েছে ‘থানায় ঢুকে পুলিশকে মেরে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা ॥ গ্রেফতার ৩॥ আটককৃতরা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এবং বহু মামলার আসামী’। এ সংবাদের প্রতিবেদক মিজানুর রহমান লিখেছেন, বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলার সংঘবদ্ধ ক’জন আসামী চাঁদপুর নৌ থানায় প্রবেশ করে পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও স্বপন নামে এক বালু ব্যবসায়ীর ওপর হামলা করে তাদের বেদম মারধর করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের তিনজন আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসী তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর নৌ থানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। পরদিন দুপুরে এ ঘটনায় নৌ থানার এএসআই মোঃ আলী আকবর বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। আটককৃত সন্ত্রাসীরা হলো : চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে পলাশ হোসেন (৩২), একই এলাকার মৃত আক্তার মোল্লার ছেলে মোঃ তাজমির মোল্লা (২৮) ও ইব্রাহিম পাটওয়ারীর ছেলে রাব্বী পাটওয়ারী (৩০)। এরা এলাকার মানুষের কাছে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া আমান উল্লাহর ছেলে মোঃ আল-আমিন (৩২) সহ অজ্ঞাতনামা আরেক আসামী পলাতক রয়েছে।
কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে কিংবা নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কেউ হাসপাতালে এসে স্বস্তি খোঁজাটাই স্বাভাবিক। তেমনটি কোনো থানায় কেউ কোনো কারণে আসলে নিজেকে নিরাপদ ভাবাটা অনেক স্বাভাবিক। চাঁদপুর নৌ থানায় মোঃ স্বপন ফরাজী (৪২) নামের এক বালু ব্যবসায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের নিরাপত্তা কিংবা অন্য কোনো কারণে এসেছিলেন। অথচ থানার ভেতরেই সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলে পড়লো। এ হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশ খেলো মার, আর ওসি খেলেন হুমকি। এ ব্যাপারে ওসি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, হামলাকারীরা চিহ্নিত অপরাধী। তারা আমার কক্ষে প্রবেশ করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে চাঁদপুর মডেল থানায় সংবাদ দেই। মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। ওসির বক্তব্যেই এ হামলাকারীদের সন্ত্রাসী রূপ ফুটে উঠেছে। কোড়ালিয়া এলাকাবাসী জানিয়েছে, নৌ থানায় হামলাকারীরা মাদক, ছিনতাই, ভূমিদস্যুতা, নারী ঘটিত অপরাধসহ হেনো কোনো অপরাধ নাই যে তারা করে না। এদেরকে এলাকার মানুষ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসেবে চিনে। আমাদের বিস্ময়জড়িত প্রশ্ন : এতো বড় সাহস ওরা পেলো কোথায়? আমরা এলাকাবাসীর পক্ষে এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।