প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
একে একে বিভিন্ন ধাপে চাঁদপুর জেলার সব ক’টি উপজেলাতেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলো। গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সেজন্যে ৫ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার কচুয়া, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলার ২৯টি ইউপির নির্বাচন অন্তত তেমনটি কিংবা তারচে’ ভালো হোক-এমন প্রত্যাশা ছিলো সচেতন জেলাবাসীর। চলমান ইউপি নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপির একাধিক নেতা বুধবারের ভোটগ্রহণ দেখে বলেছেন, নির্বাচন এমনই হওয়া উচিত। এক সাংবাদিক নেতা ফরিদগঞ্জের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, ভোটের পরিবেশ ছিলো দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের সময়কার মতোই।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায়, কচুয়ার ১২টি ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত নৌকা প্রতীকধারী প্রার্থী হিসেবে মাত্র ৪জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৮জন জয়লাভ করেছেন। হাইমচরে একই পদে ৪টি ইউপির মধ্যে দুটিতে নৌকা এবং বাকি দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। আর ফরিদগঞ্জে ১৩টি ইউপির মধ্যে ৩টিতে নৌকা, ৪টিতে বিদ্রোহী ও ৬টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে। সামগ্রিক পর্যালোচনা শেষে এ মন্তব্য করা যায় যে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড নৌকা প্রতীক বন্টনে ভুল করলেও জনগণ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্রের ছদ্মাবরণে থাকা নৌকার পুরানো লোকদেরকে ভোট বিলাতে খুব একটা ভুল করেনি। আবার বিএনপি ইউপি নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নিলেও বিভিন্ন ইউনিয়নে তাদের দলের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রার্থী হয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন।
‘নৌকা পেলেই পাস’ এমন বদ্ধমূল ধারণায় গত ৫ জানুয়ারি বুধবার চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি যেনো অনেকটা চপেটাঘাতই করেছে। প্রতীক যা-ই হোক, ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের মন জয় করতে না পারলে যে তারা ভোট বিলান না, তার প্রমাণও মিলেছে এই নির্বাচনে। যারা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে কিংবা সরাসরি দলীয় মনোনয়ন কেনার জন্যে প্রয়াস চালিয়েছেন, তারা যে বোকামি করেছেন, বুধবারের নির্বাচনের ফলাফল কিন্তু সে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। অতএব, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে শুধু ৫ জানুয়ারি ২০২২-এর নির্বাচন থেকে নয়, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১-এর নির্বাচন থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। যদি পূর্বে উত্থাপিত অভিযোগের ন্যায় কেউ রাতে/দিনে কারো ব্যালট বাক্স পুরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব না নেন, কোনো বাহিনী প্রধান আর বদনামের ভাগীদার হতে না চান, তাহলে জনগণ যে পছন্দের প্রতীকে সীল মেরে ব্যালট বাক্স পুরিয়ে দেবে-এটা অন্তত উপরোক্ত দুটি তারিখের নির্বাচন থেকে ধারণা করা যায়।