প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর শহর কোন্ নদীর তীরে অবস্থিত? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কেউ কেউ দ্বিধায় পড়েন। দ্বিধান্বিতরা বলেন, নিশ্চয়ই ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। আর ভূগোল পড়–য়ারা বলেন, মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। দ্বিতীয় জবাবটিই সঠিক। কুমিল্লা জেলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের বুক চিরে প্রবহমান ডাকাতিয়া নদীর বর্তমান অস্তিত্ব ১৮৭২ সালের পূর্বে ছিলো না। ডাকাতিয়া তখন চাঁদপুরের নিকট মেঘনায় না পড়ে চাঁদপুরের কয়েক মাইল পূর্বে দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে অসংখ্য বাঁকের সৃষ্টি করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা হয়ে দক্ষিণ দিকে মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়তো। দক্ষিণ দিকের এ ধারাটি এখন বেশ ক্ষীণ। ১৮৭২ সালে চাঁদপুর শহরের দক্ষিণ দিকে একটি খাল কেটে মেঘনার সঙ্গে ডাকাতিয়াকে যুক্ত করা হয়। ফলে এটিই ডাকাতিয়ার প্রধান ধারা হয়ে পড়ে। এই ধারা চাঁদপুর বড় স্টেশনের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মেঘনায় মিলিত হয়েছে, আর পশ্চিম দিক থেকে পদ্মা এসে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। বড় স্টেশনের পশ্চিম প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সৃষ্ট মোলহেডে গিয়ে উপভোগ করা যায় পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থলের অপরূপ সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন মোলহেডে ভিড় জমে হাজার হাজার লোকের।
এক বছর আগেও মোলহেডে সরাসরি যাতায়াতের জন্যে ছিলো একটি সড়কই। সেটি হচ্ছে চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় ‘শপথ চত্বর’ থেকে বড় স্টেশন অভিমুখী সড়ক। এ সড়কটি পর্যটকদের চাপ সামলাতে পারছিলো না বলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা বিকল্প সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসক পদে অঞ্জনা খান মজলিশের যোগদানের পর। সেমতে স্ট্র্যান্ড রোড-৫নং রেলওয়ে ঘাট-কয়লাঘাট-স্টিমার ঘাট-মাছঘাট সড়কটিকে পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত করে মোলহেডের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এ উদ্যোগটি খুবই কার্যকর বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
চাঁদপুর শহর থেকে উত্তর শ্রীরামদী মাদ্রাসা রোডস্থ লঞ্চঘাটে যাতায়াতে ‘শপথ চত্বরে’ নিত্য বিদ্যমান যানজট মোকাবেলা করতেই হয়। এতে সময় নষ্ট হয়, দুর্ভোগও পোহাতে হয়। ইদানীং সিএনজি অটোরিকশা, অটোবাইক ও রিকশাগুলো চাঁদপুর সরকারি কলেজের সম্মুখস্থ প্রফেসর পাড়া অভিমুখী মোল্লাবাড়ি রোড, চিত্রলেখা মোড়ের ভূঁইয়া বাড়ি রোড এবং গণি হাইস্কুল সংলগ্ন কোড়ালিয়া রোড দিয়ে ঢুকে যাত্রীদেরকে পাড়া-মহল্লার রোড দিয়ে বিকল্প উপায়ে লঞ্চঘাটে পৌঁছে দেয় এবং একই উপায়ে লঞ্চঘাট থেকে শহরে নিয়ে আসে। এই বিকল্প উপায়কে টেকসই করার জন্যে বিদ্যমান সরু রোডগুলোকে পুরোপুরি মেরামত ও যতোটুকু সম্ভব প্রশস্ত করার ব্যাপারে পৌর পরিষদকে বিশেষ কিছু ভাবার সময় এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এ ভাবনার অনুকূলে কাজ করাটা ব্যয়বহুল হবে বলে মনে করি না। তবে নান্দনিক চাঁদপুর শহর গড়তে ব্যয়বহুল হলেও ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে রিভার সাইড রোড নির্মাণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চাঁদপুর পৌরসভাকে কাজ করতেই হবে। এজন্যে তারুণ্যদীপ্ত পৌর মেয়রকে স্থানীয় এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিসহ সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে, প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও শরণাপন্ন হওয়াটা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।