প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
পর্যটন শব্দের অর্থ পরিভ্রমণ বা ব্যাপকভাবে ভ্রমণ। যারা এমন ভ্রমণ করে তাদেরকে বলে পর্যটক। চিত্ত বিনোদনের প্রয়োজন ছাড়া, ধর্মীয় আবেগ ছাড়া, অবসর উদ্যাপনের প্রয়োজন ছাড়া, অনুসন্ধিৎসু মনের কৌতূহল নিবৃত্ত করার প্রয়োজন ছাড়া মানুষ সাধারণত পর্যটন তথা ব্যাপক ভ্রমণে আগ্রহী হয় না। মানুষকে পর্যটক বানাতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে হয়। এজন্যে সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় অনেক বেশি।
চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, নবনিযুক্ত পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেছেন, পর্যটন শিল্পকে বড় শিল্পখাত হিসেবে দাঁড় করাতে হলে দীর্ঘমেয়াদী ও বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারলে যে কোনো দেশে বিদেশী বিনিয়োগ ও বিদেশী পর্যটক বেশি আসে। সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিশে^র কিছু দেশে সেসব দেশের সরকার ও জনগণ সার্বিক নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করায় বিদেশী বিনিয়োগ ও পর্যটক বেড়েছে। বাংলাদেশেও এমনটি সম্ভব। তিনি সম্প্রতি মতলব উত্তরের ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শনকালে এমন কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, পর্যটনে সাফল্য অর্জনকারী দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ও কৌশল জেনে আমাদের দেশে বিদেশী বড় বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এমনটি ছাড়া দেশী বিদেশী পর্যটকদের নিকট আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব হবে না।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্য সঠিক। তাঁর জন্মস্থান মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরে বেসরকারি উদ্যোক্তা হিসেবে জনৈক কাজী মিজানুর রহমান প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা বিনিয়োগে ‘মোহনপুর পর্যটন’ নামে যে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন, তাতে দিনের পর দিন পর্যটক সংখ্যা বেড়েই চলছে। যারা সামর্থ্যরে অভাবে দূরবর্তী কক্সবাজারে যেতে পারেন না, তারা এ পর্যটন কেন্দ্রে এসে বিচের মতো পরিবেশ উপভোগ করেন এবং উন্নতমানের পর্যটন কেন্দ্রের আবহ দেখে অভিভূত হন।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্যে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগকে স্থানীয় পর্যটনবান্ধব মানুষ সানন্দে গ্রহণ করায় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিন নদীর মিলনস্থলে পর্যটন কেন্দ্র গড়াকে লাভজনক ভেবে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসে পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করে। অথচ বাধা হয়ে দাঁড়ায় রেল মন্ত্রণালয়। এতে কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের আবেদনে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বড় স্টেশন মোলহেডে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ করার অনুমতি দেয়ায় রেল মন্ত্রণালয়ের বাধা টিকবে না বলে মনে হচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি জাপানী বিনিয়োগে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উক্ত মোলহেডের সাথে ক্যাবল কার ও নৌযানযোগে সংযোগ রক্ষা করে উত্তর পাশের নিকটবর্তী চরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ার ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে ‘ব্লু রিভার আইল্যান্ড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে চাঁদপুরের পর্যটন সম্ভাবনাকে এমন স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে, যা মানুষকে ঘুমুতে দিচ্ছে না। আমরা চাই এ স্বপ্নের আশু বাস্তবায়ন। এজন্যে সরকারের পক্ষ থেকে সকল আনুকূল্য প্রত্যাশা করছি।