বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

স্মারক স্তম্ভ অনেক, পরিচর্যা কম
অনলাইন ডেস্ক

এক সময় চাঁদপুর শহরে কোনো স্মারক স্তম্ভ/ভাস্কর্য/ম্যুরাল ছিলো না। চাঁদপুরের দ্বিতীয় জেলা প্রশাসক এসএম শামসুল আলম চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কে হাসান আলী হাইস্কুল মাঠের সম্মুখে রেলওয়ে লেকে ১৯৮৯ সালে ‘অঙ্গীকার’ নামে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে কলা ভবনের সামনে নির্মিত বহুল পরিচিত ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’-এর ভাস্কর প্রফেসর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে পেয়ে যান। তাঁর হাতে গড়ে উঠে ‘অঙ্গীকার’, যেটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এটি চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ হিসেবে বিবেচিত। প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে এই ‘অঙ্গীকার’ বেদীতে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গীকৃত বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ভাস্কর্যটি চাঁদপুর শহরের সবচে’ বেশি দৃশ্যমান ও উপভোগ্য হিসেবে বিবেচিত এবং বহুল পরিচিত।

মতলব দক্ষিণের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্তম্ভ হচ্ছে ‘দীপ্ত বাংলা’। ১৯৯৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মতলব মুক্ত দিবসে এ স্তম্ভটির উদ্বোধন করেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি। তারপর চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন ইউসুফ গাজী ২০০০ সালে চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র পাঁচ রাস্তার মোড়ে ‘শপথ’ নামে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক স্তম্ভ উদ্বোধন করেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান ভূঁইয়া চাঁদপুর স্টেডিয়ামের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে নির্মাণ করেন ‘ইলিশ চত্বর’। ‘শপথ’ ও ‘ইলিশ চত্বরে’র ভাস্কর হচ্ছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে কর্মরত স্বপন আচার্য। সমসাময়িক সময়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ নামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ এবং ২০০৮ সালে ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান, নূরেজ্জামান ভূঁইয়া ও আয়ুব আলী খান নামে তিন বিখ্যাত ব্যক্তির নামে ‘ওনুআ’ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। ২০১১ সালে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহার উদ্যোগে ও চাঁদপুর পৌরসভার মুখ্য পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদপুর বড় স্টেশন বধ্যভূমিতে নির্মিত হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ‘রক্তধারা’, যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। তার পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা ও জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ট্রাক রোডে স্থাপিত হয় মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের প্রথম চার শহীদ কালাম, খালেক, সুশীল ও শঙ্কর স্মরণে ‘মুক্তিসৌধ’। এটির নকশাকার স্থপতি লুৎফুল্লাহিল মজিদ, যিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রাজনীতিবিদ সফিউদ্দিন আহমেদের কনিষ্ঠ পুত্র।

চাঁদপুর পুলিশ লাইন্সে মুক্তিযোদ্ধার কন্যা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের উদ্যোগে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট সম্পন্ন হয় ‘চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ’ নামের একটি স্তম্ভের কাজ। চাঁদপুর জেলার প্রথম স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয় ১৯৮১ সালে হাজীগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধকালীন সাব-সেক্টর ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত নাসিরকোটে। এখানে ৯ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের ওপর নির্মিত হয় ‘নাসিরকোট স্মৃতিসৌধ’। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আলীগঞ্জে হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ এবং হাজীগঞ্জ বাজারের চার রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নামে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এর পেছনে হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আঃ রশিদ মজুমদার এবং হাজীগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র আ.স.ম. মাহবুব উল আলম লিপনের বড় অবদান রয়েছে। সবশেষ ২০২০ সালে মুজিববর্ষ স্মরণে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুবই দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল। একইভাবে চাঁদপুর জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেছে।

উপরোক্ত বিবরণের আলোকে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, চাঁদপুর জেলায় স্মারক স্তম্ভ, ভাস্কর্য, ম্যুরালের সংখ্যা অনেক। সত্যি কথা বলতে কি, এগুলো যতোটুকু আন্তরিকতা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, ততোটুকু আন্তরিকতায় সব ক’টিরই পরিচর্যা/সংরক্ষণ হচ্ছে না। এ নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বার বার সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। অনেক সভায় বলাবলির পর এবার চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ ‘অঙ্গীকার’ পেয়েছে ঘষা মাজা ও প্রয়োজনীয় মেরামত। এমনটি সব ক’টিরই পাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়