প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
মৃতদের জন্যে অত্যাধুনিক গোসলখানা!
কার কোথায় কখন কীভাবে মৃত্যু হবে সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। মৃত্যু হলেই যে তার দাফন বা শেষকৃত্য যথাযথভাবে হবে সেটারও নিশ্চয়তা নেই। বিমান দুর্ঘটনায় যাদের প্রাণহানি ঘটে, তাদের অধিকাংশেরই অগ্নিদগ্ধ বিকৃত লাশ পাওয়া যায়, আবার ছাই বা ভস্ম ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। নদী-সাগরে লঞ্চ, স্টিমারসহ নৌযান দুর্ঘটনায় অনেকেরই সলিল সমাধি ঘটে, যাদের লাশ খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কারো কারো এতোটা বিকৃত লাশ খুঁজে পাওয়া যায় যে, তাদের ভাগ্যে লাশের প্যাকেটে কিংবা হোগলা পেঁচানো অবস্থায় গোসল, দাফন-কাফন, জানাজা ছাড়াই গণকবরে ঠাঁই নিতে হয়। এমন মৃতদের মধ্যে কে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য ধর্মাবলম্বী সেটা জানার সুযোগ থাকে না। সেজন্যে ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া অন্যত্র অজ্ঞাত মুসলমানও অন্য ধর্মের রীতিতে শেষ কৃত্যের শিকার হয়। আবার ইসলামী রাষ্ট্রে অজ্ঞাত ধর্মাবলম্বীও কবরস্থ হয়।
|আরো খবর
প্রতিটি মানুষেরই মৃত্যু নিশ্চিত। তবে যথাযথ মর্যাদায় মৃত্যু পরবর্তী প্রক্রিয়ায় দাফন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তথা শেষকৃত্য প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত নয়। বিশে^র প্রধান প্রধান ধর্মমতে, মৃত ব্যক্তিকে শেষ গোসল করাতে হয়। কিন্তু জীবিত মানুষের জন্যে যতোটা সুন্দর গোসলখানা আছে, মৃতদের জন্যে অসুন্দর গোসলখানাও সব স্থানে নেই। আবার গোসল করানোর মতো অভিজ্ঞ বা যতœবান লোকও নেই। অধিকাংশ মৃতকে গোসল করানো হয় চাদর, পর্দা বা বিশেষ ধরনের মশারি টানিয়ে উন্মুক্ত স্থানে। জীবিতাবস্থায় প্রায় প্রতিদিন নিজের পছন্দসই বাথরুমে গোসল করার সুযোগ পেলেও মৃতাবস্থায় সেই সুযোগ বলা যায় কেউই পায় না। এটা অনেক বড় কষ্ট।
মৃতদের এ কষ্টটা সংবেদনশীলতার সাথে উপলব্ধির ক্ষমতাও জীবিতদের প্রায় কারোরই নেই। এমন তিক্ত ও কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও চাঁদপুরে পাঁচ সহোদর ভাইকে খুঁজে পাওয়া গেলো, যারা কিনা তাদের অর্থে মৃতদের গোসলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক গোসলখানা বানিয়ে দিয়েছেন। এরা হচ্ছেন : মনির হোসেন সিকদার, শাহাদাত হোসেন সিকদার, মোশারফ হোসেন সিকদার, মোবারক হোসেন সিকদার ও রাইছ হোসেন সিকদার। গত শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর ২০২১) এ গোসলখানা উদ্বোধন করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল।
চাঁদপুর শহর ও জেলার প্রসিদ্ধ কোনো বড় মসজিদে নয়, চাঁদপুর বড় স্টেশন এলাকার রেলওয়ে শ্রমিক কলোনী জামে মসজিদে মৃতদের জন্যে অত্যাধুনিক গোসলখানা নির্মাণ ও উদ্বোধন হওয়াটা কম-বেশি অবাক করার মতো বিষয়। এটি হওয়ার পেছনে মসজিদ কমিটির উদ্যোগ এবং পাঁচ ভাইয়ের পৃষ্ঠপোষকতা দৃষ্টান্তযোগ্য। আমরা এজন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানাই। মহান আল্লাহ তাদের এই ভালো কাজ কবুল করুক। আমিন।