বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

সরকারি নির্দেশ অমান্যের এমন ঔদ্ধত্য তারা দেখায় কীভাবে?

সরকারি নির্দেশ অমান্যের এমন ঔদ্ধত্য তারা দেখায় কীভাবে?
অনলাইন ডেস্ক

নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ইরাদ আলীর মতো আমাদের গ্রামীণ জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়াকে যাঁরা ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন, তাঁরা মাসশেষে বেতন পেতেন না, শ্রেণিকক্ষে তাঁদের বসার জন্যে ভাঙ্গাচুরা চেয়ারের পায়া লাগাতে সমর্থ ছিলেন না। ইট টুকিয়ে এনে একটির ওপর আরেকটি রেখে কাঠের স্থলে ইট দিয়ে নড়বড়ে চেয়ারের পায়া বানিয়েছেন। এটি অবশ্যই পরাধীন ব্রিটিশ আমলের কথা। পাকিস্তান আমলেও আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ হয়নি। বেসরকারি উদ্যোগে এক বা একাধিক বিদ্যোৎসাহীর পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত হতো টিনের ছাউনি ও বাঁশ-পাটখড়ির বেড়ায় বিদ্যালয় ঘর। পাঠদানে শিক্ষক হিসেবে স্বতঃপ্রাণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতেন পঞ্চম/অষ্টম শ্রেণি পাস, বড় জোর ম্যাট্রিক পাস করা স্থানীয় লোকজন। এরা নিকটস্থ নিজ বাড়ি থেকে এসে কিংবা আশেপাশে লজিং থেকে শিক্ষকতা করতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জোগাড় করতেন শিক্ষার্থী। মাস শেষে তাদের বেতন প্রাপ্তি ছিলো অনিশ্চিত। গায়ে থাকতো ছিন্ন বসন, পরনে থাকতো লুঙ্গি, পায়ে থাকতো না জুতো, থাকতো বড় জোর চপ্পল। তদবিরের জোরে এমন সব বিদ্যালয়ের কিছু ভবন হয়েছে, যা ছিলো বিরলদৃষ্ট।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে বিদ্যমান সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। ধীরে ধীরে বিদ্যালয়গুলোর ভবন নির্মাণ হতে থাকে, তবে বড় জোর একতলা। আর শিক্ষকদের বেতন হয়ে যায় নিয়মিত। আশির দশকে এরশাদ সরকারের আমলে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে কিছুটা অগ্রগতি ঘটে। নব্বইর দশকে এসে আরো অগ্রগতি হয়। আর চলতি একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে তো শনৈ শনৈ অগ্রগতি সাধিত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়ে, কোনো কোনো শিক্ষার্থীবহুল বিদ্যালয়ে একটি নয় একাধিক বহুতল ভবন নির্মিত হয় এবং হচ্ছে। তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের হাজার হাজার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিণত করেন, অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর ন্যায় শিক্ষকদেরও বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রধান শিক্ষকরা মাসিক বেতন-ভাতা পান অর্ধ লক্ষাধিক টাকারও বেশি, আর জুনিয়র প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন ২৫-৪০ হাজার টাকারও বেশি। সহকারী শিক্ষক হিসেবে নূতন যোগদান করে পায় প্রায় ১৮ হাজার টাকা।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্রিটিশ আমলের ইরাদ আলী মাস্টারের ন্যায় ব্রতচারী ও বেতনহীন কোনো দরিদ্র শিক্ষক নন, তারা এখন অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যায় সামর্থ্যবান শিক্ষক। তারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে নিতান্তই বাড়তি আয়ের ধান্ধায় অতিরিক্ত ফি নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা নিতে পারে না। অথচ হাজীগঞ্জসহ নানা জায়গায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু প্রধান শিক্ষক সরকারি নির্দেশ অমান্যের ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। এজন্যে তারা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং আদায়কৃত পরীক্ষার ফি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন। এজন্যে তাঁদের ধন্যবাদ। তারপরও আমাদের প্রশ্ন, উক্ত প্রধান শিক্ষকরা চলতি বছর করোনার কারণে বার্ষিক পরীক্ষা না নেয়ার নির্দেশ লঙ্ঘন করে কোন্ খুঁটির জোরে! তারা এমন ঔদ্ধত্য দেখায় কীভাবে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়