প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুরে এক সময় নাগরিক শোকসভার মোটামুটি প্রচলন ছিলো। বিখ্যাত কোনো ব্যক্তি মারা গেলেই কেউ না কেউ উদ্যোক্তা হয়ে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করতো। এক সময় লক্ষ্য করা গেলো, নাগরিক শোকসভায় বক্তা থাকলেও শ্রোতা থাকে না। আবার বক্তাদের অনেকে নিজের বক্তৃতা দিয়ে নানান অজুহাতে সভাস্থল ত্যাগ করেন। মানুষ ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে যান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি সক্রিয় থাকার কারণে শোকসভা কেনো, আনন্দ আয়োজনেও পুরো সময় দিতে চায় না। অত্যন্ত কষ্টদায়ক বিষয় হলো, অনেক মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনও শোকসভায় পুরোপুরি উপস্থিত থাকতে চান না। এমন তিক্ত বাস্তবতায় চাঁদপুরে নাগরিক শোকসভায় ভাটা পড়েছে বলে অনেক পর্যবেক্ষকের অভিমত।
নাগরিক শোকসভার এমন বাস্তবতার মধ্যেও লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালি তাদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি সদ্য প্রয়াত আলহাজ¦ মোস্তাক হায়দার চৌধুরী স্মরণে নাগরিক শোকসভার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এজন্যে ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তারা তাদের কার্যালয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন করেছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবে হবে এই নাগরিক শোকসভা। এজন্যে চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও দক্ষ সংগঠক লায়ন অ্যাডভোকেট সেলিম আকবরকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা বিশ^াস করি, প্রস্তুতি সভার এক সপ্তাহের ব্যবধানে নাগরিক শোকসভাটি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধি, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক-সামাজিক ব্যক্তিবর্গ তথা দলমত নির্বিশেষে সুধী ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় ও আন্তরিক উপস্থিতিতে প্রত্যাশার অনুকূলে হবে।
স্মর্তব্য, ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের সূর্যসন্তান হিসেবে অভিহিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজাুর রহমান চৌধুরীর মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যে মিজান চৌধুরী স্মৃতি সংসদ গঠিত হয়। এ সংসদের উদ্যোগে এবং চাঁদপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন আহমেদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে মিজান চৌধুরী স্মরণে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চাঁদপুরের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ভাষাসৈনিক আলহাজ¦ ডাঃ এম.এ. গফুর (বর্তমানে মরহুম) কুমিল্লা রোডের পশ্চিম অংশ অর্থাৎ চৌধুরী মসজিদ থেকে কালীবাড়ি মোড় পর্যন্ত অংশকে মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়ক নামকরণের প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব পৌর পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ এবং কার্যকর করে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, ডাঃ এম.এ. গফুরের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে নাগরিক শোকসভা আয়োজনের অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও করোনার অজুহাতে কেউ উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসেনি।
সে হিসেবে বলা যায়, আলহাজ¦ মোস্তাক হায়দার চৌধুরী সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। কেননা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রিয় সংগঠন লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালী নাগরিক শোকসভার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বহু সামাজিক কাজে সংশ্লিষ্ট থাকা মোস্তাক হায়দার চৌধুরীর প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হবে এবং ফলস্বরূপ তাঁর বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে বলে আমাদের অভিমত। আমরা এ নাগরিক শোকসভাটির আগাম সাফল্য কামনা করছি।