প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
ভাবতে অবাক লাগে, ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা যুব ইউনিয়নের মাত্র তিনজনের মাথায় চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা করার যে বিষয়টি আসে, সে বিজয় মেলার এবার ৩০ বছর পূর্তি হয়ে গেছে। এ বিজয় মেলা করার জন্যে প্রাথমিকভাবে যে বৈঠক হয়, তাতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র চারজন। তাঁরা হচ্ছেন অ্যাডভোকেট বিনয় ভূষণ মজুমদার, অ্যাডঃ সেলিম আকবর, অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ এবং কমরেড আবদুর রহমান। এই চারজনের আলাপচারিতায় দৃঢ় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ১৯৯২ সালের ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে বিজয় মেলা শুরু হবে। এ মেলা আয়োজনের আনুষ্ঠানিক সভা হয় ১৯৯২ সালের ২১ নভেম্বর। ৩ দিনের ব্যবধানে ২৪ নভেম্বর হয় সাধারণ সভা। সে সভাতেই জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন আহ্বায়ক ফজলুল হক তালুকদারকে বিজয় মেলার আহ্বায়ক, জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদারকে সদস্য সচিব এবং ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলামকে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট উদ্যাপন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির উদ্যোগে ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’-এর সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই মেলা আয়োজনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। ২শ’ টাকা করে ৩০টি স্টল ভাড়া দেয়া হলেও কোনো কোনো স্টল মালিক সে ভাড়াও পরিশোধ করেন নি। শহীদ জাবেদের মা মোসাম্মৎ জুলেখা খাতুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলার উদ্বোধন করেন। বিশিষ্ট শিশু সংগঠক শহীদ পাটোয়ারীর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় র্যালি। চাঁদপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তৎকালীন আহ্বায়ক জীবন কানাই চক্রবর্তী ও সদস্য সচিব মুখলেসুর রহমান মুকুল প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক ও নাট্যানুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। মঞ্চ ব্যবস্থাপনার গুরু দায়িত্বে ছিলেন চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশীদ, যিনি বর্তমানে বিজয় মেলার মহাসচিবের দায়িত্বপালন করছেন। এছাড়া আরো ডজনখানেক লোক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেন।
১৯৯২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৮ বছর ধরে এই মেলা একই স্থান অর্থাৎ হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। করোনা মহামারীর কারণে এই মেলা ২০২০ সালে বিজয় উৎসব নামে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্যে কথা উঠে, উক্ত মাঠে মাসব্যাপী বিজয় মেলা হলে শহরে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। সে কারণে ২৯ বছর পর এই মেলা এবার চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে বৃহৎ পরিসরে স্থানান্তরিত হয়।
মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী ও গৌরব সৃষ্টিকারী বিজয় মেলা নূতন জায়গায় স্থানান্তরের বিষয়টি সঠিক হিসেবে ইতোমধ্যে সুধীসহ সকল মহলে বিবেচিত হয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী মেলাটি উদ্বোধন করেন।
চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা টেকসই হওয়ার পেছনে মূল যে রহস্য সেটি হচ্ছে, এখানে মদ, জুয়া, হাউজি, অশ্লীলতা নেই। এ মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে : চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ, নূতন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ, স্বাধীনতার স্মৃতি ও চেতনা সঞ্চার, অসহায় দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি। ইত্যবসরে এসব উদ্দেশ্যের অনেকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়িত হবে সে প্রত্যাশা জোরালোভাবেই করছি।