প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুরে একই সঙ্গে অনেক সামাজিক কাজের সাথে জড়িত হাতে গোণা ক’জন ব্যক্তি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আলহাজ মোস্তাক হায়দার চৌধুরী অন্যতম। তিনি এক সময় সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তাঁর সামাজিক কাজের পরিধি রাজনীতিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। পেশাগতভাবে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি সাবেক লিভার ব্রাদার্স, পরবর্তীতে ইউনিলিভারের পরিবেশক ছিলেন এবং বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর ব্যাপক পরিচিতিতে তিনি চাঁদপুর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
মোস্তাক হায়দার চৌধুরী চাঁদপুরের শীর্ষস্থানীয় প্রাচীন সংগঠন চাঁদপুর রোটারী ক্লাবে ১৯৮৩-৮৪ রোটারী বর্ষে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৬-৮৭ রোটারী বর্ষে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ ছিলো, তিনি রোটারীর অর্থায়নে চাঁদপুর শহরের বাবুরহাটস্থ সরকারি শিশু সদনের এতিম মেয়েদের বিয়ে এবং তাদের স্বামীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এমন বিয়ের অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী (ফার্স্ট লেডী) রওশন এরশাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যেটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
মোস্তাক হায়দার চৌধুরী রোটারী ছেড়ে লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালীতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন কার্যত এ ক্লাবের অন্যতম অভিভাবক। চাঁদপুরে তিনি ছাড়া অন্য কেউ রোটারী ও লায়ন্সের মতো দুটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সংগঠনের সভাপতি পদে দায়িত্বপালন করতে পারেন নি।
তিনি রোটারী ও লায়ন্স থেকে নিঃস্বার্থ সমাজসেবার দীক্ষা নিয়ে চাঁদপুরের উল্লেখযোগ্য সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তিনি চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল, মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চাঁদপুর ইউনিটের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি এ হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন করেন।
মোস্তাক হায়দার চৌধুরীর শিক্ষানুরাগ ছিলো ঈর্ষণীয়। তিনি এক সঙ্গে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (গণি মডেল ও নূরীয়া) এবং দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব সক্রিয়তা ও সুনামের সাথে পালন করেন। তিনি ছিলেন পুরাণবাজার কলেজ গভর্নিংবডির অন্যতম সদস্য। তার ক্রীড়ানুরাগ ছিলো প্রবল। তিনি ক্রীড়া সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৯৯ সালে চাঁদপুর কণ্ঠের উদ্যোগে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার আয়োজনে লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনালের ডিস্ট্রিক্ট ও নিজ ক্লাব থেকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২০১২ সালে চাঁদপুর সাঁতার পরিষদ গঠনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
তিনি চাঁদপুরে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের প্রসারে আন্তরিক ভূমিকা পালন করেন। তিনি এ কার্যক্রমে জেলা কমিটির উপদেষ্টা ও চাঁদপুর অঞ্চল-১০-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। তিনি ছিলেন চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদের মোতওয়াল্লী ও সভাপতি, চাঁদপুর কালেক্টরেট মসজিদ কমিটির অন্যতম সদস্য। এছাড়া আরো বহু প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে তিনি উপদেষ্টাসহ বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
এতোটা সামাজিক কাজে নিবেদিতপ্রাণ আলহাজ¦ মোশতাক হায়দার চৌধুরী প্রায় ৭৫ বছর বয়সে গত ৫ ডিসেম্বর ২০২১ রোববার মাগরিবের নামাজের সময় (সাড়ে ৫টায়) সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। এর ফলে চাঁদপুরের সামাজিক অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হবার নয়। তাঁর উদ্যম ও স্পৃহা অনুসরণযোগ্য। তিনি তাঁর কর্মযজ্ঞে চাঁদপুরের ইতিহাসে ঠাঁই পাবেন সসম্মানে। চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবার তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে।