রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৬

কলেজটির শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রশাসনের সহযোগিতার আশ্বাস কার্যকর হোক

অনলাইন ডেস্ক
কলেজটির শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রশাসনের সহযোগিতার আশ্বাস কার্যকর হোক

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে হাজীগঞ্জে সর্বনিম্নে বলাখাল মকবুল আহমেদ কলেজ। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, হাজীগঞ্জের বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজেটি এবারে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের সর্বনিম্নে স্থান করে নিয়েছে। উপজেলার ৯টি কলেজের মধ্যে সর্বনিম্ন ফলাফল করেছে এ কলেজটি। পাসের হার, এ প্লাস, এ, এ মাইনাসের দিকে চিন্তা করে ফলাফল পর্যালোচনা করলে কোনো দিক দিয়ে ভালো করতে পারেনি কলেজটি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত ফলাফলে দেখা যায়, চলতি বছর এ কলেজ থেকে ৮৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে মাত্র ১৯ জন। ফেল করেছে ৬৯ জন।পাসের হার ২১.৫৯। এবারে ১ জন শিক্ষার্থীও ‘এ প্লাস’ পায়নি, ‘এ’ ও ‘এ মাইনাস’ পেয়েছে ১ জন করে। ‘বি’ পেয়েছে ৮ জন, ‘সি’ পেয়েছে ৯ জন।

উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মনোরম পরিবেশে কলেজটির অবস্থান সুন্দর হলেও ফলাফল ভালো না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখছে স্থানীয়রা। তবে অনেক অভিভাবক ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে শিক্ষকগণের নিজেদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্যকে দায়ী করছেন। ভবিষ্যতে কলেজটির ভালো ফলাফল অর্জন করতে হলে শিক্ষকদেরকে আরো দায়িত্বশীল হবার তাগিদ দেন এই সকল অভিভাবক। বলাখালের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য, এ কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী, দলিল লিখক মিজানুর রহমান জানান, এখানে শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব প্রকট। শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে ভালো শিক্ষক এখান থেকে চলে যায়, তাই শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করতে পারে না। বলাখাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বেপারী জানান, এতো সুন্দর পরিবেশের একটি কলেজ, অথচ ফলাফলের কারণে আমরা বাইরের মানুষের কাছে লজ্জা পাই। ভালো শিক্ষকও এখন নেই, আর শিক্ষকদেরকে দায়িত্বশীল না হলে এ রকম ফলাফল অব্যাহত থাকবে। হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, কলেজটির শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

আমাদের জানা মতে, এ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একজন শিক্ষক নেতা এবং গভর্নিং বডির সভাপতি একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব। ইউএনও মহোদয় গভর্নিং বডির সাথে একান্তে সভা করে কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে সমস্যা কোন্ জায়গায় সেটা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর অভিভাবক, এলাকার শিক্ষানুরাগী, সুধীজনদের সাথে বসে তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করার জন্যে সভা আহ্বান করা যেতে পারে। এমনকি কলেজে কর্মরত শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পরামর্শ গ্রহণের উদার মানসিকতা প্রদর্শন করতে হবে। তারপর কলেজের শিক্ষা উন্নয়নের নবযাত্রা হলে সেটা নিশ্চিত ফলপ্রসূ হবে। শিক্ষকমণ্ডলী ও গভর্নিং বডির সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ করার প্রবণতা থাকলে সেটা কীভাবে দূর করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

স্মর্তব্য, বলাখাল মকবুল আহমেদ কলেজের সোনালী অতীত আছে। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর, হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নের কৃতী সন্তান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মকবুল আহমেদ। আর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষও স্থানীয় উচ্চঙ্গা গ্রামের আলোকিত মানুষ মকবুল আহমেদ। দু মকবুল আহমেদ পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সুযোগ্য শিক্ষকদের উন্নত পাঠদান এবং সাবেক এমপি ডা. এম এ সাত্তার ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মেয়র অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরীসহ স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সুধীজনদের আন্তরিক সহযোগিতায় কলেজটিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, এইচএসসি পরীক্ষায় এ কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়ার যোগ্যতা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে তখন এ কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির হিড়িক লেগেছিলো। অথচ সেই কলেজটিতে অনেক প্রচার-প্রচারণার পরও শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে চায় না। এ বছর ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে তিন বিভাগে মাত্র ৪৩জন ভর্তি হয়েছে। এ কলেজ সংলগ্ন দুটি নামকরা হাইস্কুল (বলাখাল জেএন ও চন্দ্রবান)-এর শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাস করে যদি এ কলেজটিতে ভর্তি হতো কিংবা তাদেরকে ভর্তি হতে উদ্বুদ্ধ করা হতো, তাহলে এ কলেজে বিদ্যমান ভবনের বাইরে নূতন ভবন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতো। কিন্তু সেটি দেখা যাচ্ছে না। কেন? এ প্রশ্নের জবাব খোঁজারও যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়