প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩৪
আবুল কাশেম চৌধুরীর স্মরণ দৃষ্টান্তযোগ্য
কোনো মানুষ যদি সম্পদ গড়ার চেয়ে আদর্শিক চেতনা সঞ্চারের কাজটি বেশি করেন তাঁর জীবদ্দশায়, তাহলে তাঁর সন্তানসহ অন্য উত্তরসূরিরা তাঁকে স্মরণ না করে পারে না। এমনই একজন মানুষ হচ্ছেন আবুল কাশেম চৌধুরী। তিনি নিঃসন্দেহে চাঁদপুরের গর্ব। কেননা তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অকুতোভয় সাহস নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সবচে’ বড় কথা, তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক। তিনি ঐতিহাসিক কাগমারি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হবার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৫১ থেকে ’৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি চাঁদপুর শহর যুবলীগের সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ১৬ বছর তিনি ছিলেন তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
|আরো খবর
আবুল কাশেম চৌধুরী ছিলেন যেনো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক অতন্দ্র প্রহরী। তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছর চাঁদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দেড় যুগের এ সময়টাতে আওয়ামী লীগের সুদিনের চেয়ে দুর্দিন ছিলো প্রবল থেকে প্রবলতর। তিনি কোনো মোহে পড়ে দলের দুর্দিনে দল ত্যাগ করেননি এবং দৃঢ়চিত্ততায় আদর্শিক চেতনা বিচ্যুত হননি। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ২০ বছর যাবৎ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে ১৯৫৪ সালে ৭ মাস কারাবরণ করেন।
রাজনীতির পাশাপাশি আবুল কাশেম চৌধুরী সামাজিক, শিক্ষা এবং ধর্মীয় কর্মকা-ে সক্রিয় ছিলেন। তিনি পিতার নামে আমিনুল হক পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তাঁদের চৌধুরী পরিবারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গণি মডেল হাই স্কুল ও নূরিয়া পাইলট হাই স্কুলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৬ বছর যাবৎ। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি পুরাণবাজার জামে মসজিদের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন সুচারুরূপে। তিনি ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সে সুবাদে তিনি চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার ছিলো আবুল কাশেম চৌধুরীর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পুরাণবাজারস্থ চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদে দোয়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মোঃ নকীবুল ইসলাম চৌধুরী পিতার জন্যে প্রতি বছর দোয়ানুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকায় পিতার জীবনীসহ সংবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এটা কিন্তু দৃষ্টান্তযোগ্য। কেননা তাঁর পিতার চেয়েও অনেক বিখ্যাত কিছু লোকের মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর পালিত হয় না। পত্রিকায় জীবনী প্রকাশ দূরে থাক। আমরা নকীবুল ইসলাম চৌধুরী থেকে বাবা-মা হারা সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।