বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৪

নাটকের মঞ্চ থেকে সমাজসেবায়ও অনন্য শিশু থিয়েটার

সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদক
নাটকের মঞ্চ থেকে সমাজসেবায়ও অনন্য শিশু থিয়েটার

নাটক শুধু বিনোদন নয়, শিশুদের মানসিক বিকাশের এক শক্তিশালী মাধ্যম, এই বিশ্বাস থেকেই ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ পিএম বিল্লালের উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে ‘শিশু থিয়েটার’। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য ছিলো কোমলমতি শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করা এবং সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে তাদের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করা।

২০০১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় সংগঠনটির প্রথম প্রযোজনা ‘বাংলাবাসি ভালো’ নাটিকাটি মঞ্চস্থের মাধ্যমে তাদের নাট্যযাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে থেমে থাকেনি এ পথচলা। এখন পর্যন্ত তারা মঞ্চস্থ করেছে সাতটি নাটকের ৩১টি প্রদর্শনী, এর মধ্যে দুটি প্রযোজনার একাধিক মঞ্চায়নও হয়েছে। বাংলাবাসি ভালো, পেনশন, ব্যারিকেড চারদিকে, লেখাপড়া, ছড়ার জন্ম, বাউল বাঁশির সুর ও ভালো কাজ তাদের মঞ্চস্থ নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, যা শিশুদের মননশীলতা গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।

শুধু নাট্যচর্চা নয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডেও রয়েছে এই শিশু থিয়েটারের সক্রিয় অংশগ্রহণ। তারা বিভিন্ন সময়ে চাঁদপুরে গরীব অহসায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, এমনকি প্রায় ৪৫ জন শিশুর লেখাপড়ার খরচ বহনের মতো মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে এই সংগঠনের সদস্যরা। তাদের এই প্রচেষ্টা সমাজে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে এই শিশু থিয়েটারের সাফল্যও কম নয়। একুশে সুবর্ণ জয়ন্তী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০২ উপলক্ষে মঞ্চস্থ হওয়া ‘লেখাপড়া’ নাটকটি শিশুদের শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার স্বীকৃতি পেয়ে ‘একুশের’ সনদ অর্জন করে। এছাড়া পঞ্চম জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব-২০০২, জিয়া শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব-২০০৩ এবং শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন আয়োজনেও তারা অংশ নিয়েছে। এমনকি এই থিয়েটারের শিল্পীরা দেশের গর্ব বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)তেও অংশগ্রহণ করেছে, যা তাদের যোগ্যতা ও সৃজনশীলতার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

শিশুদের মধ্যে নাট্যনির্ভর শিক্ষা ও নৈতিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এই শিশু থিয়েটার সমাজকে জানিয়ে দেয়, শিল্পের মাধ্যমে সম্ভব নতুন প্রজন্মের মাঝে মানবিকতা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পিএম বিল্লালের স্বপ্ন এবং শত প্রতিকূলতাকে জয় করে তাদের এই অদম্য প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

এভাবেই এই শিশু থিয়েটার হয়ে উঠেছে শুধু একটি নাট্যসংগঠন নয়, একটি সামাজিক আন্দোলন, শিশুদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে নতুন আলো দেখানোর এক উজ্জ্বল প্রদীপ।

সবচেয়ে বড়ো কথা, এই থিয়েটারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট হয়ে উঠে প্রতিষ্ঠাতা পিএম বিল্লালের স্বপ্ন ও প্রত্যয়, শিশুদের মননে ভালোবাসা, ন্যায়বোধ আর শিল্পের প্রতি প্রেম গড়ে তোলা। তাই এই শিশু থিয়েটার আজ শুধু একটি সংগঠন নয়, শিশুদের জীবন গঠনের এক উজ্জ্বল বাতিঘর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়