প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৯
প্রচলিত ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব : ইসলাম ও বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য

বন্ধু শব্দটি খুবই প্রিয় শব্দ। ইংরেজিতে বলে ফ্রেন্ড এবং আরবিতে বলে ‘খলিল’। ‘ওরে দোস্ত বা বন্ধু শোন’-এই ছিল এক ছেলে তার ছেলে বন্ধুকে আহ্বান করার নিয়ম এবং ‘ওরে সই বা বান্ধবী শোন ‘--এই ছিল এক মেয়ে তার বান্ধবীকে আহ্বান করার নিয়ম। হ্যঁা সেটা ছিল পুরানো যুগ আর এখন হলো আধুনিক যুগ। বন্ধুত্ব হলো এমন একটা বন্ধন, যা মানুষকে যেমন কাছে টানে তেমনি দূরেও ঠেলে দেয়। এর টান এমন শক্তিশালী যে, বন্ধুর প্রয়োজনে নিজের সবচেয়ে দামি প্রাণটাও দেওয়া যায়। আবার অন্যকে বন্ধুর অমোঘ টানে আটকে রেখে খুব সুন্দর কায়দায় প্রতারণা করে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়, এমনকি তার সস্তা প্রাণটাও নেওয়া যায়। বন্ধু এমন আকর্ষণীয় এক জিনিস যা খুবই রহস্যময়। আসলে বন্ধুত্ব এমন একটি পবিত্র সম্র্পক, যা একই সাথে পরম নির্ভরতা, সহযোগিতা, ভালবাসার মিথষ্ক্রিয়তায় গঠিত।
সময়ের পরিবর্তনকে অনুসরণ করে বদলেছে সময়, বদলেছে কথাবার্তার ঢঙ। সে ছিলো নিজ ধর্ম ও সভ্যতাকে পায়ে পায়ে ও ধাপে ধাপে চলার যুগ, কিন্ত আজ সারা বিশ্ব ধীরে ধীরে নির্লজ্জ ও নোংরা পশ্চিমা সূর্যের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। সমস্ত লজ্জা এবং নোংরামির সীমা পার করছে সারা জাহান।
✪ বন্ধুত্ব :
ইংরেজিতে কিছু অভিনব শব্দ রয়েছে! যেমন : জাস্ট ফ্রেন্ড, গুড ফ্রেন্ড এবং বেস্ট ফ্রেন্ড! আমাদের সমাজেও বন্ধুদের মাঝে প্রায়ই শব্দগুলো শোনা যায়। কাউকে জিজ্ঞেস করলে, উনি কী হন তোমার? জবাবে কেউ বলেন, জাস্ট ফ্রেন্ড। আবার কেউ বলেন, গুড ফ্রেন্ড। আবার কেউ কেউ বলেন, এই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সমাজে অনেক রকম বন্ধুত্বের সস্পর্ক বিদ্যমান। কারো রয়েছে ক্লাসের বন্ধু, কারো আবার জাস্ট ফ্রেন্ড অথবা বেস্ট ফ্রেন্ড।
তাছাড়া এই আধুনিক যুগে আরও অভিনব শব্দ ঢুকেছে, যা এক ছেলে তার মেয়ে বন্ধুত্ব সম্পর্কে আহ্বান করে, যা হলো ‘বেস্টি’ (ইবংঃরব) এবং মেয়ের পরিবর্তে ডাকে ‘বেস্টু’ (ইবংঃঁ)। এসব পশ্চিমা নোংরা সভ্যতা থেকে উৎপত্তি।
✪ ইতিহাস :
আসুন দেখি ‘বেস্টি’ প্রচলিত শব্দের উৎসের ইতিহাস-ঙঊউ বলে যে, শব্দটি ‘মূলত এবং প্রধানত ব্রিটিশ’ এবং এটির প্রথম উদ্ধৃতি হিসেবে ১৯৯১ সালের দ্য অবজারভারের উদ্ধৃতি রয়েছে : “উরধহধ’ং ভৎরবহফং ড়ভঃবহ ফধঃব ভৎড়স ঃযব ফধুং ইঈ (ইবভড়ৎব ঈযধৎষবং). ঝড়সব ধৎব ইবংঃরবং ৎবষরধনষব ঢ়ধষং ভৎড়স ংপযড়ড়ষ.”
এরপর ২০০৮ সালে এক উপন্যাসে ব্যবহৃত হয়। তারপর ক্রমে ক্ৰমে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। অবশেষে ২০১০ সালে দ্য টাইমস ম্যাগাজিনে ব্যবহৃত হয়, আর এটার ব্যবহার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
✪ ছেলে-মেয়েদের বন্ধুত্ব বৈধ কি না :
ইংরেজিতে কিছু শব্দ রয়েছে--জাস্ট ফ্রেন্ড, গুড ফ্রেন্ড এবং বেস্ট ফ্রেন্ড। বন্ধুদের মাঝে প্রায়ই শব্দগুলো শোনা যায়। কী হয় তোর? এই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সমাজে অনেক রকম বন্ধুত্বের সস্পর্ক বিদ্যমান। কারো রয়েছে ক্লাসের বন্ধু, কারো আবার জাস্ট ফ্রেন্ড অথবা বেস্ট ফ্রেন্ড। সমাজে প্রচলিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ইসলাম একেবারেই নিষেধ করে দিয়েছে। যেখানে একজন পুরষের জন্যে ১৪ জন নারী ব্যতীত সব নারী এবং একজন নারীর জন্যে ১৪ জন পুরুষ ব্যতীত সব পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হারাম করেছেন, সেখানে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করা একেবারেই অসম্ভব। কারণ, বন্ধুত্ব নামক সম্পর্ক থেকে আস্তে আস্তে সেটি বেহায়াপনার সম্পর্কে গিয়ে পেঁৗছায়। এমনকি ব্যভিচারও হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “(হে রাসুল সা.) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত ও নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে।”-- সুরা আন-নুর। (আয়াত ৩০-৩১)
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে : যে গুপ্ত অঙ্গ দেখায় এবং দেখে উভয়ে অভিশপ্ত। কাম প্রবৃত্তির প্রথম ও প্রারম্ভিক কারণ হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা ও দেখা এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে ব্যভিচার। (তাবারানী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি বিষাক্ত শর। (তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন)।
এ থেকে বোঝা যায় যে, বন্ধুত্ব করতে হবে পুরুষ পুরুষের সাথে এবং মহিলা মহিলার সাথে। কোনো বিপরীত লিঙ্গের গায়রে মুহাররমের সাথে জাস্ট, গুড এবং বেস্ট ফ্রেন্ড নামক সম্পর্ক একেবারেই হারাম।
✪ ইসলামের দৃষ্টিতে :
এ বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার যে, দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে ইসলামে নারী ও পুরষ কখনো এক নয়। নিজ নিজ সক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে পুরুষ যেমন স্বতন্ত্র, একজন নারীর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেমন নর নারীর ভিন্নতা আছে, তেমনি শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্নতা বিদ্যমান। নারী পুরুষের সাধারণ যোগাযোগ ও মেলামেশায় ইসলামে কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু বিশেষ সম্পর্ক ও মেলামেশার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ রয়েছে। ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির মানুষের মাঝে যদি পারস্পরিক সদ্ভাব ও আচরণ বজায় থাকে, তবে তাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গঠনে ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করেছে।
উপরে বর্ণিত পন্থায় পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে শারীরিক মেলামেশায় অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একজন পুরুষ কোনো গাইরে মাহরামকে তথা যাদের সাথে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তাকে কোনো অবস্থাতেই স্পর্শ করতে পারে না। খুব প্রয়োজনে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষকে যোগাযোগ করতে হয়, তবে তার বিধান হচ্ছে নারীকে অবশ্যই যথোপযুক্ত পোশাক পরিধান করতে হবে এবং ইসলাম নির্ধারিত পন্থায় কথা বলতে হবে। আর কোনো অবস্থাতেই তৃতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি ব্যতীত নির্জন স্থানে যেতে পারবে না।
ছেলে-মেয়ে, যুবক-যুবতী, কিংবা পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বন্ধুত্ব বৈধ কিনা তা জানার আগে আমরা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আয়াতের বাংলা অনুবাদ দেখে নেই। সেখানে মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন :
“হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত (আহলে কিতাবদের) নও! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও, তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলো না, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বলো এবং তোমরা অবস্থান করো স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মতো নিজেদের প্রকাশ করো না।”(সূরা আহযাব : আয়াত-৩২)
উপরোক্ত আয়াত সমূহে পরিষ্কার ভাষায় স্পষ্ট করে মেয়েদেরকে অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে এবং আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
✪ বিশেষজ্ঞদের উক্তি :
সতেরো শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেছিলেন, “একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না, কারণ এখানে আবেগ আছে , দৈহিক আকাঙ্ক্ষা আছে।” একই কথা বলেছেন আইরিশ কবি অস্কার উইল্ডে “নারী এবং পুরুষের মাঝে কেবলই বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব । যা থাকতে পারে তা হলো আকাঙ্ক্ষা, দুর্বলতা, ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা।” বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে ঢোকা একটা ভণ্ডামি! শুধুই সুযোগের অপেক্ষা। সবশেষ পরিণতি পরকীয়া।
বাংলা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, “ছেলে আর মেয়ে বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তারা অবশ্যই প্রেমে পড়বে । হয়তো খুবই অল্প সময়ের জন্য অথবা ভুল সময়ে । কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য । তবে প্রেমে তারা পড়বেই । শুধুই সুযোগের অপেক্ষা।”
✪ বন্ধুত্ব নয় তো কি?
সত্যি বলতে, ছেলে ও মেয়েতে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব অসম্ভব ও প্রকৃতি বিরুদ্ধ। কেননা শুধুমাত্র বন্ধুত্ব হলে প্রকৃতি নিজের অস্তিত্ব হারাবে। চুম্বক আর লোহা কখনো পাশাপাশি থাকতে পারে না.... আকৃষ্ট করবেই। যদি কেউ তা এড়িয়ে যায় তবে সে ভণ্ডামি করছে নয়তো ধেঁাকা দিচ্ছে। আগুনের পাশে মোম গলবেই। ছেলে ও মেয়ে বন্ধুত্ব হতে পারে, কিন্তু একসময় প্রেমে বা অবৈধ সম্পর্কে রূপ নিবেই। শুধুই সুযোগের অপেক্ষা। আর এটাই স্বাভাবিক।
তবে তাদের এই মন্তব্যগুলোকে জোরালো ভাবে সমর্থন দিচ্ছে ঋষরৎঃধঃরড়হংযরঢ়, যার অর্থ হচ্ছে ছিনালি করা। কড়া ভাষায় বলতে গেলে নোংরামি করা । তাই অভিভাবক সহ সবাইকে এ ব্যাপারে এখনই বিশেষ ভাবে সতর্ক হওয়া আবশ্যক। নয়তো আমরা ক্রমান্বয়ে ওই সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। তাই লক্ষ্য রাখুন, আপনার বোন কিংবা মেয়ে, স্বামী কিংবা স্ত্রী, ভাই কিংবা ছেলে, কাদের সাথে মিশছে। নিজেকেও এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক রাখতে হবে। কারণ শয়তান সব সময় মানুষের পিছনে লেগে আছে তাকে বিপথগামী করার জন্যে। সঙ্গটাই এই খানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা খুব ভালো বন্ধু থাকতে পারে। এরপরেই আর পারে না। দুজনের যে কোনো একজন আরেকজনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, দুজনেই হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলেটা মেয়েটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ছেলেরা এমনিই একটুতেই দুর্বল হয়ে পড়ে, একটুতেই ভালোবেসে ফেলে।
কোনো মেয়ে তার প্রতি একটু কেয়ারিং হলেই সে মনে করে মেয়েটা বুঝি তাকে ভালোবাসে। তার সবচেয়ে কাছের মেয়ে বন্ধুটা যখন দিনের পর দিন তার কেয়ার নেয়, খেঁাজখবর নেয়, কারণে অকারণে ঝগড়া করে, যখন আবেগ দেখায়, তখন ছেলেটা ধরেই নেয় মেয়েটা তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। ছেলেটা মনে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতে করতে আর মেয়েটার অতি কেয়ারিং আচরণের কারণে ছেলেটা নিজের অজান্তেই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলে। ...অথচ মেয়েটা কখনোই ছেলেটাকে ভালোবাসেনি। শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবেই দেখে এসেছে। মেয়েরা তার ভালোবাসার মানুষ আর বন্ধু এই দুজনকে সম্পূর্ণরুপে পৃথক করতে পারে। যে মেয়েটা একটা ছেলেকে বন্ধু ভাবে সে সবসময় তাকে বন্ধুই ভাবে, ভালোবাসার মানুষ ভাবে খুব কমক্ষেত্রেই। ছেলেরা সেটা পারে না। তারা একটা মেয়ের কাছে বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু হতে চায় ।
✪ ছেলে এবং মেয়েদের মাঝে বন্ধুত্বের কুফল :
প্রথমে বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হওয়া সম্পর্কের শেষ পরিণতি অনেক সময় ব্যভিচারেও রূপান্তরিত হয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপরে ফোনে কথা বলা, এরপরে ক্যাম্পাসে অথবা কোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা কোনো পার্কে গিয়ে পাশাপাশি বসা অথবা হাত ধরে হঁাটা এবং গল্প করা। এরপরে থাকতে পারে বিভিন্ন আবদার। মোট কথা ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব সম্পর্কের মাঝে যতগুলো কাজ হয়ে থাকে, প্রত্যেকটি কাজই হাদীস শরীফ অনুযায়ী ব্যভিচার। এ বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : চোখের যিনা হচ্ছে-দেখা; জিহ্বার যিনা হচ্ছে-কথা, অন্তর কামনা করে ও উত্তেজিত হয় এবং যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা বাস্তবায়ন করে না।” সহিহ মুসলিমে আরো এসেছে--“দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে-দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে-শোনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে-কথা, হাতের যিনা হচ্ছে-ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে-হঁাটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।” ইবনে বাত্তাল (রহ.) বলেন : “দৃষ্টি ও কথাকে যিনা বলা হয়েছে যেহেতু এগুলো প্রকৃত যিনার আহ্বায়ক। এজন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।” (ফাতহুল বারি)
বন্ধুত্ব থাক দূরের কথা, কোনো বেগানা নারীর দিকে তাকানোও নিষেধ। এ বিষয়ে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী থেকে মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিস মতে, ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোনো বেগানা নারীর উপর দৃষ্টি পতিত হলেই সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। হযরত আলী (রা.) বর্ণিত হাদিস মতে, প্রথম দৃষ্টি মাফ এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ। হঠাৎ ও অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত ক্ষমার যোগ্য। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, পর্দার ব্যাপারে হাদীসে এতো কঠিন ভাষায় বলা হয়েছে যে, একবারের বেশি দ্বিতীয়বার কোনো বেগানা নারীর দিকে তাকানো যাবে না। সুতারং জাস্ট, গুড এবং বেস্ট ফ্রেন্ড নামক সম্পর্ক একেবারে হারাম।
✪ কাদের সাথে বন্ধুত্ব করবো :
বন্ধুত্ব যেহেতু ভালো জিনিস, সেহেতু ভালো মানুষদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে হবে। বন্ধু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কুরআন মাজিদ ও হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “ঈমানদার ব্যক্তিরা কখনো ঈমানদারদের বদলে কাফেরদের বন্ধু বানাবে না। যদি তোমাদের কেউ তা করে, তবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্কই থাকবে না।” [সূরা আল-ইমরান : ২৮]
এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, এমন ব্যক্তিকে আমরা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবো, যে ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান। যেহেতু আমরা বন্ধুছাড়া চলতে পারি না, সেহেতু বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।
এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, “মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই তোমাদের যে কেউ যেন বিবেচনা করে দেখে কাকে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছে। [তিরমিজি]
এ হাদীস দ্বারা এটাই বোঝায় যে, বন্ধু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না। যার সাথে বন্ধুত্ব করার ফলে জীবন ধ্বংসের দিকে যেতে পারে। যেমন : বর্তমান যুগ অনুযায়ী উদাহরণ দেয়া যেতে পারে মাদকাসক্ত, চরিত্রহীন, চোর, ডাকাত, ধর্ষক ইত্যাদি। তবে কাউকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে নিজের চরিত্রকে ঠিক রেখে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা এটা দোষণীয় নয়।
✪ উপসংহার :
অবশেষে বলা যেতে পারে যে, বন্ধুত্ব আর প্রেম দুটোই এক না। কিন্তু উভয়ে ভালোবাসা ও কেয়ারিং পাওয়া যায়। প্রেম করতে ইসলাম উৎসাহ করে না, কিন্তু হয়ে গেলে তাকেই বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছে। নচেৎ তার পূর্বে কোনো ধরনের মেলামেশার অনুমতি দেয় না। বলা হয়, প্রেম হলো এক পবিত্র জিনিস, কিন্তু লোকে তার ভুল পথে ব্যবহার করে তার মান ঘঁাটিয়ে দেয়। বর্তমানে ছেলে ও মেয়ের অবৈধ মিলনের দিক দিয়ে প্রেমের নামও বদনাম।
একটা মেয়ে যখন ‘বন্ধু’ হিসেবে একটা ছেলের প্রতি অনেক বেশি কেয়ারিং হয়, তার মানে এটা না, কখনোই না যে মেয়েটা ছেলেটাকে ভালোবাসে! বরং মেয়েরা জন্মগতভাবেই কেয়ারিং হয়। তার আশেপাশের খুব কাছের মানুষদের জন্যে সে অনেক বেশি কেয়ারিং হয়। তাই যখন ছেলেটা তার খুব কাছের মেয়ে বন্ধুর কেয়ারিংয়ের কারণে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভালোবাসার জন্য তার সামনে দঁাড়ায়, মেয়েটার মাথায় তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ছেলেটাও ভাবতে পারে না মেয়েটা তাকে ভালোবাসে না বরং শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবে দেখে। এরপর তারা দূরে সরে যায়। মেয়েটা কষ্ট পায় সে খুব কাছের একজন বন্ধুটাকে হারালো সেজন্যে। ছেলেটা কষ্ট পায় যখন হঠাৎ কেয়ারি মেয়েটা তার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। বন্ধু হিসেবেও তাকে পায় না, ভালোবাসার মানুষ হিসেবেও না। তারপর শুরু হয় এভয়েড করা। সমাপ্তি হয় একটা সুন্দর সম্পর্কের।
(তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য)
লেখক পরিচিতি : মো. আব্দুস সালাম (শিপলু), ডিএইচএমএস, (রাজশাহী), এমএসএস (এশিয়ান ইউনিভার্সিটি) বগুড়া, বাংলাদেশ।