মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪৫

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে শাহাদাতে কারবালার স্মরণ সভায় ওলামায়ে আহলে সুন্নাত

মাহে মহররম এবং রবিউল আউয়ালে মুমিন-মুনাফিক চেনা যায়

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট।।
মাহে মহররম এবং রবিউল আউয়ালে মুমিন-মুনাফিক চেনা যায়
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুনাজাতরত নেতৃবৃন্দ।

১০ মহররম পবিত্র আশুরা উপলক্ষে শাহাদাতে কারবালা তথা আহলে বাইতে রাসুলগণের স্মরণে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, চাঁদপুর সদর ও পৌর কমিটির আয়োজনে সংগঠনের জেলা অফিসে রোববার (৬ জুলাই ২০২৫) সকালে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, চাঁদপুর পৌর কমিটির সভাপতি মাওলানা এএইচএম আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চাঁদপুর জেলার সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা জসিম উদ্দিন আল-কাদেরী। বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চাঁদপুর সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুর পৌর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রউফ খান, মতলব উত্তর উপজেলা ওলামায়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আহমাদুল্লাহ, মাওলানা জাফর আলী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল-আমিন সাকি প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা চাঁদপুর জেলা সভাপতি বজলুর রশিদ সোহেল।

বক্তাগণ পবিত্র আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম, আর তৃতীয় মাস হচ্ছে রবিউল আউয়াল। এই দুটি মাস মুসলিম উম্মাহর জন্যে গুরুত্ব বহন করে। এই দুটি পবিত্রতম মাসে মুমিন এবং মুনাফিক চেনা যায়, পার্থক্য করা যায়। মুসলমান নামধারী মুনাফিকরা কারবালার চেতনাবিরোধী। আহলে বাইতে রাসুলকে ভালোবাসার নাম যে ঈমান, তা ইয়াজিদের অনুসারী মুনাফিকরা মানতে চায় না। অথচ কোরআনেই আহলে বাইতকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। তারা ইয়াজিদকে ভালোবাসে, ইয়াজিদকে কাফির বলা যাবে না, ইয়াজিদের উপর লা'নত দেয়া যাবে না--এমন আকীদা পোষণ করে। আর এ ধরনের আকীদা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাবিরোধী। তারা হচ্ছে ইয়াজিদপ্রেমী মুসলমান। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী সুন্নী মুসলমানরা হচ্ছেন হোসাইনী মুসলমান। ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হক্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কারবালার ময়দানে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইয়াজিদ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে সর্বশেষ ভাষণে বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নাই? অথচ ইয়াজিদ বাহিনীর সংখ্যা ছিলো ২২ হাজার মতান্তরে ৩০ হাজার। এই বিশাল বাহিনীর মধ্যে অসংখ্য হাফেজে কোরআন ছিলো, মুহাদ্দিস ছিলো, মুফতি ছিলো, আলেম ছিলো। কিন্তু ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহুর ভাষণের দ্বারা বোঝা গেলো, তাদের কেউই ঈমানদার মুসলমান নয়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম হাসান এবং হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহুমা সম্পর্কে বলেছেন, 'যারা আমার হাসান হোসাইনকে ভালোবাসবে তারা আমাকে ভালোবাসলো। আর যারা হাসান হোসাইনের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, তারা আমি নবীর সাথেও শত্রুতা পোষণ করলো। হে আল্লাহ! আমি হাসান হোসাইন দুজনকে ভালোবাসি, আপনিও তাদেরকে ভালোবাসেন।' ঠিক একইভাবে রবিউল আউয়াল মাস আসলে মুমিন-মুনাফিক চেনা যায়। এই মাসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শুভাগমন হয়েছে। এ উপলক্ষে নবী প্রেমিক সুন্নী মুসলমানরা ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে থাকে। আর ইয়াজিদের অনুসারী মুনাফিক মুসলমানরা ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকে বিদআত, নাজায়েজ বলে। অতএব, মহররম এবং রবিউল আউয়াল মাসে মুমিন এবং মুনাফিক চেনা যায়।

বক্তাগণ বলেন, আহলে বাইতকে ভালোবাসা হচ্ছে ঈমান। আর আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ রাখা হচ্ছে কুফরি। সকল সাহাবা সত্যের মাপকাঠি, জান্নাতি। সাহাবায়ে কেরামগণ হচ্ছেন আকাশের তারকারাজির ন্যায়। তাঁদের যে কাউকে অনুসরণ করবে, বান্দা হেদায়েত লাভ করবে। আর প্রিয়নবীর আহলে বাইতগণ হচ্ছেন হজরত নূহ আলাইহিসসালামের কিশতি তথা নৌকার ন্যায়। অর্থাৎ যারা নূহ আলাইহিসসালামের নৌকায় আরোহন করেছে, তারাই মহাপ্লাবন থেকে নাজাত পেয়েছে। তদ্রূপ যারা আহলে বাইতকে মহব্বত করবে, ভালোবাসবে, তাঁদের দামানকে আঁকড়ে ধরবে, তারাই নাজাত পাবে। আর এই আকীদার বিরোধী হচ্ছে শিয়া এবং খারেজি, নাসেবী, রাফেজিরা। আর সুন্নী মুসলমানরা শিয়াজম এবং খারেজিবাদ থেকে মুক্ত। বক্তাগণ ইসলামের এসব মৌলিক আকীদার বিষয়গুলো মুসলিম উম্মাহর মাঝে তুলে ধরার জন্যে অনুরোধ জানান।

আলোচনার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ রফিকুল ইসলাম। নাতে রাসুল এবং শানে ইমাম হোসাইন পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চাঁদপুর সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. সাইফুদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান এবং অর্থ সম্পাদক আলী হায়দার। সবশেষে মিলাদ কিয়াম, মুনাজাত এবং তবররুক বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা ও ছাত্রসেনার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে মনোমুগ্ধকর নাতে রাসুল, শানে ইমাম হোসাইন, কবিতা আবৃত্তি এবং মিলাদ কিয়াম পরিবেশনা এক আবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অনেকে আহলে বাইতের প্রেমে অশ্রুসিক্ত হন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়