শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ০০:৫৮

রাতুল ও মতি

তাইয়্যেব হোসাইন
রাতুল ও মতি

একদিন দুপুরবেলা, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। স্কুল ছুটির পর সবাই দৌঁড়ে বাড়ির দিকে ছুটছে। ছাতা ছিল না রাতুলের, ভিজেই ফিরছিল সে। হঠাৎ একটি শব্দ কানে এলো—টুপটাপ বৃষ্টির শব্দের মাঝে যেন কেউ কাঁদছে!

কৌতূহল নিয়ে রাস্তার ধারে এক গাছের নিচে গিয়ে দেখে, একটি ছোট পাখির ছানা ভিজে একেবারে কাঁপছে। গাছ থেকে পড়ে গেছে নিশ্চয়ই। আশপাশে মা পাখির কোনো চিহ্ন নেই। আশ্রয়হীন সেই পাখিকে দেখে রাতুলের মন কেঁদে উঠল।

সে ব্যাগের চেইন খুলে, ধীরে ধীরে ছানাটিকে তুলল ভিতরে। খুব যত্ন করে ব্যাগের এক কোণে শুকনো রুমাল পেতে রাখল। বাড়ি ফিরে মাকে বলল, “মা, আজ একটা নতুন বন্ধু পেয়েছি। ওর নাম রাখলাম মতি!”

মা হেসে বললেন, “নাম সুন্দর, তবে বন্ধুটার যত্ন নিতে হবে ঠিকমতো।

সেই দিন থেকেই শুরু হলো রাতুল আর মতির এক নতুন জীবন। ছোট ছানাটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকল, ওর পালক শুকিয়ে উঠল, চোখে মুখে ফিরে এলো প্রাণ। দিনগুলো হয়ে উঠল আনন্দে ভরা।

স্কুলে যাবার সময় মতি ব্যাগে বসে যেত। টিফিনে রাতুল নিজে খেয়ে মতির জন্যও কিছু রেখে দিত। স্কুলের বন্ধুরাও মতিকে দেখে খুব খুশি হতো। শিক্ষকরা মতিকেও যেন চিনে ফেলেছিলেন।

রাতুল বাড়িতে পড়তে বসলে, মতি টেবিলের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকত। মাঝেমধ্যে কাগজে ঠোকর দিত, আবার কখনো চোখ মেলে তাকিয়ে থাকত রাতুলের মুখের দিকে। এমনকি রাতে গল্প পড়ার সময়, মতি পাশে বসে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ত, যেন ও-ও গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়ে।

রাতুল বলে, “মতি শুধু একটা পাখি না, ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। যখন আমার মন খারাপ থাকে, ও পাশে এসে বসে থাকে। মাথায় ঠোঁট ঘষে, যেন বলছে—‘তুই একা না।’”

একদিন স্কুলে ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা হলো। রাতুল লিখল—“আমার বন্ধুর নাম মতি। ও পাখি, কিন্তু ওর মধ্যে আছে এক মানুষের মতো হৃদয়।”

এই লেখাটা সবার মন ছুঁয়ে গেল। শিক্ষকরা বললেন, “এই সম্পর্ক আমাদের শেখায় ভালোবাসা, দয়া আর সহানুভূতি।”

রাতুল ও মতির এই বন্ধুত্ব এখন শুধু ওদের পরিবারের নয়, পুরো পাড়া-মহল্লার গর্ব। ছোটরা পাখিকে ভালোবাসতে শিখছে, বড়রা রাতুলের মতো মমতা দেখাতে উৎসাহিত হচ্ছে।

একটা ছোট ছানার সঙ্গে এক শিশুর বন্ধুত্ব বদলে দিল অনেক কিছু। কারণ ভালোবাসা কখনো ভাষা খোঁজে না—সেটা অনুভবেই প্রকাশ পায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়