প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৪৬
শ্রীনগরের বিস্ময়-কিশোরেরা! সালামির টাকায় গড়ে তুলছে মানবতার এক নতুন ইতিহাস

এসএসসি পরীক্ষার আগে যখন দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী ব্যস্ত নিজের প্রস্তুতি আর স্বপ্নপূরণের মহড়া দিতে, তখন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে উঠে এসেছে এক অভূতপূর্ব মানবিক গল্প। স্বপ্ন, সম্ভাবনা আর সহমর্মিতার এই গল্পের নায়ক দুই কিশোর—যারা স্ব-ইচ্ছায় নিজেদের ঈদের সালামির টাকা তুলে দিয়েছে গরিব-অসহায় মানুষের জন্য।
এই মানবিক ঘটনার সূচনা বাঘরা স্বরূপ চন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আলোচনার মধ্য দিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই কিশোর যখন বিদ্যালয়ে একটি প্রয়োজনে এসে ফেরার পথে নিজেদের মধ্যে সালামি পাওয়া নিয়ে কথা বলছিল, তখন তাদের কথোপকথন হঠাৎ শুনে ফেলেন একজন অভিভাবক নারী। প্রথমে মনে হয়েছিল এটি হয়তো ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির সাধারণ আলোচনা। কিন্তু পর মুহূর্তেই উন্মোচিত হয় ব্যতিক্রমী এক মনোভাব।
"আমি তিন হাজার পেয়েছি, তুই সাড়ে তিন... চল, কিছু টাকা দিয়ে গরিবদের সাহায্য করি।" —এই একটি বাক্যে ফুটে ওঠে তাদের মহান সংকল্প।
শুনে থমকে যান ওই অভিভাবক। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি দুই কিশোরকে থামিয়ে অভিনন্দন জানান, আশীর্বাদ করেন, বলেন—"তোমরা সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা।"
ছায়ার মধ্যেও দীপ্তিমান আলো
একটি ঈদের সালামির টাকা, যা দিয়ে কেউ হয়তো নতুন পোশাক কিনে, কেউ ঘুরতে যায়, কেউ মজাদার খাবারে আনন্দ খোঁজে—সেই টাকাই দুই কিশোর নিজেরা উপভোগ না করে অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর অঙ্গীকার করেছে। এটা শুধু অর্থদান নয়, এটি একটি মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। এটি এমন এক শিক্ষা, যা হয়তো বইয়ের পাতায় নেই, কিন্তু জীবনের পাঠশালায় অমূল্য।
সমাজে আলোড়ন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্বিত শ্রীনগরবাসী
এই ঘটনাটি এখন শ্রীনগর জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষক, অভিভাবক, সমাজকর্মী—সবাই বিস্ময় আর গর্বে বলছেন, “এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।” স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন,
"ওদের নাম হয়তো আমরা জানি না, কিন্তু ওরা আমাদের চেতনায় নাম লিখিয়ে গেল।"
শ্রীনগরের বিশিষ্ট সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম জানান, "এই কিশোরদের কাজ প্রমাণ করে, মূল্যবোধ হারিয়ে যায়নি—বরং তা ঘরে ঘরে নতুনভাবে জন্ম নিচ্ছে।"
নামহীন নায়কেরা, অগোচর মহত্ত্ব
এই কিশোরদের পরিচয় প্রকাশ পায়নি, হয়তো তারা নিজেরাও চায় না এই কাজের জন্য আলোচনায় আসতে। কিন্তু এটাই তো প্রকৃত মহত্ব—যেখানে প্রশংসা নয়, উদ্দেশ্যই বড়। তাদের এই উদ্যোগ শুধু শ্রীনগরেই নয়, গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মকে ভাবাবে, অনুপ্রাণিত করবে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ