প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৯
অল্পের জন্য রক্ষা: পার্বতীপুরে এক লাইনে দুই ট্রেন, চালকের দক্ষতায় বাঁচলো হাজারো প্রাণ
মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলো পার্বতীপুর
![মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলো পার্বতীপুর](/assets/news_photos/2025/02/13/image-58896-1739470286.jpg)
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলস্টেশনে এক চুলের জন্য রক্ষা পেলো হাজারো ট্রেনযাত্রীর প্রাণ। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্টেশনের ৬ নম্বর লাইনে একসঙ্গে দুইটি ট্রেন প্রবেশ করায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়। তবে চালকের দ্রুত সিদ্ধান্ত ও দক্ষতার কারণে ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
|আরো খবর
কীভাবে ঘটল এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি?
জানা গেছে, পূর্ব দিক থেকে স্টেশনের ৬ নম্বর লাইনে শানটিং করছিল রামসাগর এক্সপ্রেস। একই সময় সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনটি পার্বতীপুরের আউটার সিগন্যালে প্রবেশ করে। ট্রেন পরিচালনার জন্য সুইচ কেবিন থেকে নির্দেশ আসে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেসকে ৬ নম্বর লাইনে প্রবেশ করানোর। ফলে সিগন্যাল পেয়েই ট্রেনটি একই লাইনে প্রবেশ করে, যেখানে রামসাগর এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে ছিল।
ট্রেনচালকের দক্ষতায় রক্ষা
দোলনচাঁপা এক্সপ্রেসের চালক আব্দুস সামাদ ট্রেনটি প্রবেশ করাতেই বুঝতে পারেন, সামনে আরেকটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ব্রেক কষেন এবং প্ল্যাটফর্মের কাছাকাছি গিয়ে ট্রেনটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তার তাৎক্ষণিক দক্ষতা ও উপস্থিত বুদ্ধির কারণেই কয়েক হাজার যাত্রী অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
রেল কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
ট্রেনের পরিচালক বজলুল করিম জানান, "সুইচ কেবিনের নির্দেশেই ট্রেনটি ওই লাইনে প্রবেশ করেছে। তবে সৌভাগ্যবশত বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।"
এদিকে, রিলে কেবিনের সিগন্যাল মাস্টার নুর কুতুবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রেল নিরাপত্তা ও তদারকিতে গাফিলতি?
এই ধরনের ঘটনা রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিচালনায় বড় ধরনের ত্রুটির ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একই লাইনে দুইটি ট্রেন প্রবেশ করানোর মতো ভুল প্রশাসনিক দুর্বলতা, প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা বা অপারেশনাল গাফিলতির কারণে হতে পারে।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সম্প্রতি পার্বতীপুর এলাকায় একাধিকবার রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পার্বতীপুর-রংপুর রেলপথে গুলপাড়া এলাকায় একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়, ফলে রংপুরের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলওয়ের আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা ও দক্ষ পরিচালনা না থাকলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জে রেলপথ থেকে পাথর চুরির ঘটনায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য বরখাস্ত হওয়ার খবরও রেল নিরাপত্তার দুর্বলতা নির্দেশ করে।
রেল কর্তৃপক্ষের করণীয়
এই ধরনের ঘটনা এড়াতে স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা এবং ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া, অভিজ্ঞ চালকদের প্রশিক্ষণ, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রেলওয়ের জন্য এখন সময়ের দাবি।
সতর্কতা না নিলে বড় দুর্ঘটনা সময়ের ব্যাপার!
সৌভাগ্যক্রমে, চালকের দক্ষতায় এ যাত্রায় কোনো প্রাণহানি হয়নি। তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যায়।
ডিসিকে/এমজেডএইচ