ফরিদগঞ্জে বিতর্ক ক্লাব বাস্তবেই হোক

ফরিদগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ইউএনও সুলাতানা রাজিয়া বলেছেন, বিতর্ক শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিতর্ক ক্লাব করা হবে। তাঁর এমন বক্তব্যে বিতর্কের উর্বর ভূমি ফরিদগঞ্জের বিতর্কপ্রেমী ও বিতার্কিকদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া। তিনি বলেন, সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনে বিতর্ক হলো এমন একটি মাধ্যম, যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, আপনাকে বিতর্ক মঞ্চে কথা বলতে হলে স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে। তাহলে অবশ্যই আপনাকে বই ঘাঁটতে হবে। বিতর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে তাৎক্ষণিক যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। যা মেধা বিকাশের একটি বড়ো সহায়ক। আমি নিজেও বিতর্কপ্রেমিক। তাই ইচ্ছা রয়েছে বিতর্ক শিল্পকে এগিয়ে নিতে ফরিদগঞ্জে একটি বিতর্ক ক্লাব করা। পুরো ফরিদগঞ্জে শুধু একটি ক্লাব হবে তেমনটি নয়, বরং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে ক্লাব গঠন করা যেতে পারে। যাতে প্রশিক্ষণসহ নানা আয়োজন থাকবে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল্যাহ আল মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক অশোক সাহা, ইউআরসি প্রধান তারেক নাথ মল্লিক, আইসিটি কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চক্রবর্তী, শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক তাহেরুল ইসলাম, সাবেক বিতার্কিক শামীম হাসান ও বাঁধন শীল। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানান, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্কুল পর্যায়ে ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে এবং কলেজ পর্যায়ে ৮টি কলেজ নিয়ে এই প্রতিযোগিতা শুরু হলো। উদ্বোধনী দিনে স্কুল পর্যায়ে ৮টি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ফরিদগঞ্জ ছাড়া চাঁদপুরের আর অন্য কোনো উপজেলায় ২৪ টি বিতর্ক দলের অংশগ্রহণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের খবর এখনো পাওয়া যায় নি। এটা সম্ভব হয়েছে ফরিদগঞ্জে গত ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ অন্য আয়োজকদের ব্যানারে ধারাবাহিক বিতর্ক চর্চার কারণে সৃষ্ট কিছু বিতর্ক সংগঠক ও বিতার্কিকদের কল্যাণে। এতে ফরিদগঞ্জের ইউএনও মহোদয় উদ্দীপ্ত না হয়ে পারেন নি। সেজন্যে তিনি এই উপজেলার বিতর্ক চর্চাকে টেকসই করতে বিতর্ক ক্লাব করার তাগিদ অনুভব করেছেন এবং এ ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণা কার্যকর হোক, অর্থাৎ বাস্তবেই ফরিদগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় বিতর্ক ক্লাব হোক--এটা আমাদের হার্দিক প্রত্যাশা।

ফরিদগঞ্জে উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বিতর্ক ক্লাব হলে এবং এই ক্লাবের প্রণোদনা ও কর্ম পরিকল্পনায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্ক ক্লাব হলে বাচিক শিল্পের উৎকর্ষতায় ফরিদগঞ্জের অগ্রযাত্রা শুধু চাঁদপুর জেলার জন্যে শুধু নয়, দেশের জন্যে মডেল হবে--এটা হলফ করে আমরা বলতে পারি। এই বলার পেছনে গত ১৫ বছরে বিতর্ক অঙ্গনে ফরিদগঞ্জের সাড়া জাগানো সাফল্যে সৃষ্ট বিতর্কগাথার কথা তো বলিষ্ঠভাবেই উচ্চারণ করা যায়। বিতর্ক শিল্পের লালনে ফরিদগঞ্জের মানুষ যেভাবে এগিয়ে আসে, সাফল্য যেভাবে করায়ত্ত করে, সেটা দেড় দশকে ফরিদগঞ্জ ছাড়া চাঁদপুরের অন্য কোনো উপজেলায় ব্যাপকভাবে দেখা যায় নি। অতএব, ইউএনও মহোদয় বিতর্ক ক্লাব করে ফরিদগঞ্জে বিতর্ক শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটার ফলোআপ হলে তিনি তাঁর ফরিদগঞ্জের স্বল্প/দীর্ঘ কর্মকালেই তৃপ্তির হাসি হেসে যেতে পারবেন।