বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১১

আজহারীর মাহফিলে ভিড়ের সুযোগে চুরির তরঙ্গ: ৩০০ জনের হাত খালি

মো. জাকির হোসেন
আজহারীর মাহফিলে ভিড়ের সুযোগে চুরির তরঙ্গ: ৩০০ জনের হাত খালি
আজহারীর মাহফিল

যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিল ঘিরে বিপুল মানুষের ঢল নেমেছিল। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত এই মাহফিলে অংশ নিয়ে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিস হারানোর অভিযোগ করেছেন অসংখ্য ভুক্তভোগী। ঘটনার পর থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ভিড় জমিয়েছেন এসব মানুষ। শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত থানায় প্রায় ৩০০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ভিড়ের চাপে বিশৃঙ্খলা, পদদলিত হয়ে আহত ২০

যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বক্তব্য দেন। তাঁর উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই লাখো মানুষ ভিড় করেন মাহফিল এলাকায়।

আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, এদিন মাহফিলে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। ভিড়ের কারণে সড়কজুড়ে যানজট তৈরি হয়। পদদলিত এবং ধাক্কাধাক্কির কারণে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১১ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জিনিসপত্র হারানোর অভিযোগের বন্যা

মাহফিলে মানুষের ঢল আর ভিড়ের সুযোগ নিয়ে অনেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে ভিড় জমাচ্ছেন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার বলেন,

“শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি জিডি হয়েছে। অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখিয়ে জিডি করেছেন। ভিড়ের কারণে এখনও অনেক অভিযোগ জমা হচ্ছে। চুরির কিছু অভিযোগও এসেছে।”

পুলিশের তৎপরতা

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন,

“মাহফিলে ৫-৭ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। ভিড়ের চাপে অসংখ্য মানুষ তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়েছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও আমরা পেয়েছি। পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।”

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাঝে বিশৃঙ্খলা

মাহফিলের শেষ দিন সন্ধ্যায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বক্তব্য দেন। মাহফিলটি ছিল অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ভরপুর। তবে আয়োজকদের পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভুক্তভোগীদের কণ্ঠে অসহায়ত্ব

মাহফিলে অংশ নেওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান,

“মাহফিলে যাওয়ার সময় মোবাইল আর স্বর্ণালংকার সঙ্গে রেখেছিলাম। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে কখন যে হারিয়ে গেছে, বুঝতেই পারিনি।”

অন্যদিকে, আয়োজকরা বলছেন,

“মাহফিলটি এত বড় আকার ধারণ করবে তা আমরা ধারণা করতে পারিনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সারসংক্ষেপ

যশোরে আজহারীর মাহফিল একটি ঐতিহাসিক সমাগমের নজির স্থাপন করলেও বিশৃঙ্খলা ও সম্পদ হারানোর ঘটনা এই আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মানুষ ধর্মীয় অনুপ্রেরণা পেতে গিয়েও ভিড় ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে, তবে এত বিপুল মানুষের ক্ষতি পূরণ কতটা সম্ভব হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়